৩ বছর বয়সে ২ স্কুল থেকে বিতাড়িত যমজ শিশু: অভিভাবকদের কান্না!

শিরোনাম: শিশুদের স্কুল থেকে বহিষ্কার: উন্নত ভবিষ্যতের পথে অন্তরায়?

ছোট্ট শিশুদের প্রারম্ভিক শিক্ষা জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে বিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের ঘটনা বাড়ছে। সম্প্রতি, যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় অঙ্গরাজ্যের ন্যাপারভিলে-এর বাসিন্দা এক দম্পতির যমজ তিন বছর বয়সী কন্যা শিশুদের দুটি প্রি-স্কুল থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে।

তাদের অভিযোগ ছিল, শিশুরা ক্লাসে মনোযোগী ছিল না। তাদের বাবা-মায়ের মতে, শিশুদের সামান্য ‘সুযোগ’ দেওয়া উচিত ছিল।

শিশুদের বিদ্যালয়ে পাঠানোর প্রথম দিনের স্মৃতি এখনো তাদের বাবা-মায়ের মনে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করে। উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্নে বুক বাঁধা মা-বাবা যখন দেখেন তাদের সন্তানদের বিদ্যালয়ের পরিবেশ থেকে দূরে থাকতে হচ্ছে, তখন তাদের মন ভেঙে যায়।

ডেটা অ্যানালিস্ট ইয়িফান সান জানান, “প্রথম দিনের ছবি দেখলে এখন মন খারাপ হয়, খুব কষ্ট হয়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, শিশুদের বিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের ঘটনা তাদের ভবিষ্যতের ওপর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলতে পারে। এই ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা শিশুদের শেখার ক্ষেত্রে বড় ধরনের ক্ষতি ডেকে আনে।

উদ্বেগের বিষয় হলো, কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে।

ইউনিভার্সিটি অফ নেব্রাস্কার আর্লি চাইল্ডহুড ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ওয়াল্টার গিলিয়াম-এর মতে, আমেরিকাজুড়ে এমন ঘটনার শিকার হওয়া পরিবারের সংখ্যা কয়েক হাজার। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের তুলনায় প্রি-স্কুলের শিশুদের বহিষ্কারের হার তিনগুণ বেশি।

কৃষ্ণাঙ্গ ছেলেশিশু এবং প্রতিবন্ধী শিশুদের ক্ষেত্রে এই হার আরও বেশি।

২০২০ সাল থেকে, বিশেষ করে কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে অনেক বিদ্যালয়ে শিক্ষক ও কর্মীদের মধ্যে মানসিক চাপ বেড়েছে।

অনেক স্কুলে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা নেই। গিলিয়াম মনে করেন, শিক্ষক এবং শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা করে বহিষ্কারের হার কমানো যেতে পারে।

অভিভাবকদের অভিযোগ, শিশুদের বিদ্যালয়ে মানিয়ে নেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত সময় দেওয়া হয়নি। সন্তানদের ভালোভাবে বোঝার আগেই তাদের স্কুল থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে।

চিকিৎসকের পরামর্শ ও বিভিন্ন পরীক্ষার পর জানা গেছে, শিশুদের স্বাভাবিক বিকাশে কোনো সমস্যা নেই।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রি-স্কুলে শিশুদের বহিষ্কার করা কঠিন কিছু নয়। কারণ, এখানে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মতো তেমন কোনো আনুষ্ঠানিকতা নেই।

অনেক ক্ষেত্রে, স্কুল কর্তৃপক্ষ অভিভাবকদের জানায়, “আমরা মনে করি, এই স্থানটি আপনার সন্তানের জন্য উপযুক্ত নয়।

গিলিয়াম বলেন, এর জন্য আসলে কাকে দোষ দেওয়া হবে, তা বলা কঠিন। শিক্ষক, শিক্ষা ব্যবস্থা নাকি শিশুরা—আসলে সমস্যাটা অনেক গভীরে। শ্রেণীকক্ষে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত বেশি হলে বহিষ্কারের সম্ভাবনা বাড়ে।

এছাড়া, ডিপ্রেশন বা মানসিক অবসাদে ভোগা শিক্ষকরা শিশুদের বহিষ্কার করার প্রবণতা দেখান, এমনটাও দেখা গেছে।

বাংলাদেশেও শিশুদের প্রারম্ভিক শিক্ষার ক্ষেত্রে এমন কিছু সমস্যা দেখা যায়। বিদ্যালয়ে সীমিত সম্পদ, শিক্ষক-শিক্ষার্থীর উচ্চ অনুপাত এবং মহামারীর কারণে শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ইত্যাদি বিষয়গুলো এখানেও উদ্বেগের কারণ।

শিশুদের বিদ্যালয়ে মানিয়ে নেওয়ার জন্য অভিভাবকদের সহযোগিতা এবং শিক্ষকদের সহানুভূতি প্রয়োজন। শিশুদের বেড়ে ওঠার উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে পারলে, তাদের ভবিষ্যৎ আরও উজ্জ্বল হবে।

তথ্য সূত্র: পিপল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *