গুয়াতেমালার কারিগরদের নিপুণ হাতে তৈরি হচ্ছে পবিত্র সপ্তাহের শোভাযাত্রার জন্য মখমলের পোশাক।
মধ্য আমেরিকার দেশ গুয়াতেমালার পবিত্র সপ্তাহ, যা খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উৎসব, তার প্রস্তুতি এখন তুঙ্গে। এই উৎসবের প্রধান আকর্ষণ হলো বিশাল শোভাযাত্রা, যেখানে যিশু এবং মেরির কাঠের মূর্তিগুলিকে সুসজ্জিত করে শহর প্রদক্ষিণ করা হয়।
আর এই মূর্তিগুলির জন্য মাসব্যাপী চলছে বিশেষ পোশাক তৈরির কাজ।
গুয়াতেমালার সান মিগুয়েল এসকোবার এলাকার একটি ছোট কারখানায়, প্রায় ২৮ জন কারিগর, যাদের অধিকাংশই নারী, দিনরাত কাজ করছেন এই পোশাকগুলো তৈরি করতে। তাঁদের হাতের ছোঁয়ায় তৈরি হচ্ছে ভারী মখমলের পোশাক, যা সোনার সুতো দিয়ে সূক্ষ্মভাবে এমব্রয়ডারি করা হচ্ছে।
এই পোশাকগুলো পরে শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারীরা শহরের পাথুরে রাস্তা দিয়ে হেঁটে যায়। জানা যায়, মেরির জন্য তৈরি একটি পোশাকের ওজন প্রায় ২২ কেজি পর্যন্ত হতে পারে।
এই পোশাক তৈরির কাজটি অত্যন্ত কঠিন এবং এতে অনেক ধৈর্য্যের প্রয়োজন। কারিগর আলেহান্দ্রো জুয়ারেজ টলেডোর মারিয়া অক্সিলিয়াডোরা নামক এই কর্মশালায় গত ২৬ বছর ধরে এই কাজ চলছে।
তিনি জানান, পোশাক তৈরির সময় যখন এমব্রয়ডারি কাপড়ের সাথে যুক্ত করা হয়, তখন তাঁর চোখে জল আসে। তাঁর মতে, “এই মুহূর্তটা আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, তখনই আমি আমার ক্লায়েন্টের সাথে এই কাজটি অনুভব করতে শুরু করি এবং কাজটি আরও উপভোগ করি।”
গুয়াতেমালার এই পবিত্র সপ্তাহের শোভাযাত্রা শুধু একটি উৎসব নয়, এটি তাদের সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ।
ইউনেস্কো (UNESCO) এই উৎসবকে “ইনট্যানজিবল কালচারাল হেরিটেজ অফ হিউম্যানিটি” হিসেবে ঘোষণা করেছে, যা এই উৎসবের গুরুত্ব আরও বাড়িয়ে তোলে।
গুয়াতেমালার বাইরে, প্রতিবেশী দেশ এল সালভador, হন্ডুরাস, কোস্টারিকা এবং পানামাতেও এই কারিগরদের তৈরি পোশাক ব্যবহার করা হয়।
ঐতিহাসিক ওয়াল্টার গুতেরেসের মতে, “শোভাযাত্রাগুলো গুয়াতেমালার সংস্কৃতি, আধ্যাত্মিকতা এবং ঐতিহ্যের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।”
এই পোশাকগুলো তৈরির মাধ্যমে কারিগররা তাঁদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রেখেছেন।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস