ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে এলিলির নতুন ঔষধ! ফল দেখে চমকে উঠলেন সবাই

ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সুখবর! এলিলিলি’র নতুন ঔষধ, ওজন কমিয়ে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম।

বিশ্বজুড়ে ডায়াবেটিস একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য গবেষণা চলছেই। সম্প্রতি, মার্কিন ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানি এলিলিলি (Eli Lilly) তাদের তৈরি করা একটি নতুন ঔষধের ঘোষণা দিয়েছে, যা টাইপ ২ ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য অত্যন্ত কার্যকরী হতে পারে।

এই ঔষধটি পিল আকারে খাওয়ার যোগ্য এবং এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘অরফোরগ্লিপন’ (orforglipron)।

কোম্পানির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তৃতীয় ধাপের (Phase 3) ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে এই ঔষধটি বেশ ভালো ফল দিয়েছে। এই ট্রায়ালে অংশগ্রহণকারী টাইপ ২ ডায়াবেটিসের রোগীরা গড়ে প্রায় ৮% পর্যন্ত ওজন কমাতে সক্ষম হয়েছেন।

শুধু তাই নয়, তাদের রক্তে শর্করার পরিমাণ (A1C লেভেল) উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। উল্লেখ্য, A1C হলো গত তিন মাসের গড় রক্তের শর্করার পরিমাপ।

ডায়াবেটিসের চিকিৎসায় ইনজেকশন-এর পরিবর্তে পিল-এর ব্যবহার নিঃসন্দেহে একটি বড় সুবিধা। কারণ, অনেক রোগীর কাছে ইনজেকশন নেওয়াটা বেশ কষ্টকর।

তাছাড়া, পিল আকারে ঔষধ তৈরি করা হলে, তা রোগীদের জন্য সহজলভ্য ও খরচ সাশ্রয়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও বাজারে ইতিমধ্যেই ডায়াবেটিসের চিকিৎসার জন্য কিছু পিল-এর প্রচলন আছে, তবে সেগুলোর সঙ্গে খাদ্যাভ্যাস সহ কিছু বিধি-নিষেধ মানতে হয়।

এলিলিলির নতুন ঔষধের ক্ষেত্রে তেমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।

অন্যদিকে, এলিলিলির প্রতিযোগী কোম্পানি ফাইজার (Pfizer)-এর অনুরূপ একটি ঔষধ তৈরির কাজ মাঝপথে বন্ধ হয়ে গেছে। ফাইজার তাদের পরীক্ষায় কিছু রোগীর লিভারে সমস্যা হতে দেখেছে।

তবে এলিলিলি কর্তৃপক্ষের দাবি, তাদের তৈরি করা ঔষধের পরীক্ষায় এমন কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের ঔষধ (GLP-1 রিসেপ্টর অ্যাগোনিস্ট) রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এই ঔষধগুলো অগ্ন্যাশয়কে ইনসুলিন তৈরি করতে উৎসাহিত করে এবং অন্য একটি হরমোনের নিঃসরণ কমিয়ে আনে।

ফলে রোগীদের ক্ষুধা কম লাগে এবং পেট ভরা থাকার অনুভূতি হয়, যা ওজন কমাতে সহায়ক।

এলিলিলি কর্তৃপক্ষের মতে, তাদের ট্রায়ালে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৬৫ শতাংশেরও বেশি রোগীর A1C লেভেল ৬.৫% বা তার নিচে নেমে এসেছে। সাধারণত, এই মাত্রার নিচে থাকলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আছে বলে ধরা হয়।

বর্তমানে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রাপ্তবয়স্ক জনসংখ্যার প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষ অতিরিক্ত ওজনের শিকার এবং ১১.৬ শতাংশের বেশি মানুষের ডায়াবেটিস রয়েছে।

বাংলাদেশেও ডায়াবেটিস একটি ক্রমবর্ধমান স্বাস্থ্য সমস্যা। তাই, এলিলিলির এই নতুন ঔষধ যদি অনুমোদন পায় এবং বাজারে আসে, তবে তা বাংলাদেশের রোগীদের জন্য নিঃসন্দেহে একটি আশার আলো নিয়ে আসবে।

এলিলিলি খুব শীঘ্রই তাদের পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করবে এবং কর্তৃপক্ষের অনুমোদনের জন্য আবেদন জানাবে। কোম্পানিটি আশা করছে, ২০২৬ সালের মধ্যে তারা ডায়াবেটিস চিকিৎসার জন্য ঔষধটি বাজারে আনতে পারবে।

একইসঙ্গে, ওজন কমানোর ব্যবস্থাপনার জন্য ঔষধটি অনুমোদন করারও চেষ্টা চলছে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *