মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে হামের প্রকোপ বাড়ছে, যা মোকাবিলায় অর্থ সংকট দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি দেশটির বিভিন্ন রাজ্যে হামের সংক্রমণ দ্রুত ছড়াচ্ছে, যা জনস্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যা ৬৫০ ছাড়িয়ে যাওয়ায় পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে পড়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (সিডিসি)-এর তথ্য অনুযায়ী, টেক্সাস অঙ্গরাজ্য বর্তমানে এই সংক্রমণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। সেখানকার স্বাস্থ্য বিভাগ সিডিসির কাছে অতিরিক্ত সাহায্য চেয়েছে, কিন্তু তহবিল ঘাটতির কারণে সংকট আরও বাড়ছে। জানা গেছে কোভিড-১৯ মহামারীর সময় দেওয়া কিছু অনুদান সরকার তুলে নেওয়ায় হাম প্রতিরোধের কাজেও সমস্যা হচ্ছে। এর ফলস্বরূপ, টেক্সাসের ডালাস কাউন্টিতে পঞ্চাশটির বেশি টিকাদান কর্মসূচি বাতিল করতে হয়েছে।
নিউ মেক্সিকোতে, যেখানে ৬৩ জনের বেশি হাম রোগী শনাক্ত হয়েছে, সেখানেও টিকা সরবরাহ এবং টিকাদান সংক্রান্ত কর্মীদের ছাঁটাই করতে হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারলে তা আরও খারাপ রূপ নিতে পারে। সংক্রমণ শুধু টেক্সাস, নিউ মেক্সিকো, এবং ওকলাহোমাতেই সীমাবদ্ধ নেই, বরং কানসাস, এমনকি কানাডা ও মেক্সিকোর সীমান্ত পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে। ভাইরাসের একই ধরনের স্ট্রেইন (genotype sequence) পাওয়া গেছে বলে জানা গেছে।
হাম প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ এবং জনবল খুঁজে বের করতে হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। টেক্সাসের স্বাস্থ্যকর্মীরা পরিস্থিতি মোকাবিলায় অন্যান্য বিভাগ থেকে কর্মী এনে কাজ করছেন। কিন্তু সীমিত সম্পদের কারণে স্বাস্থ্যকর্মীদের উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ছে, যা তাদের জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
একটি হাম রোগীর চিকিৎসা বাবদ প্রায় ৩০ থেকে ৫০ হাজার মার্কিন ডলার খরচ হতে পারে। এর মধ্যে পরীক্ষা, ল্যাবরেটরি কাজ, আক্রান্তদের চিহ্নিত করা, টিকাদান এবং স্বাস্থ্যসেবার খরচ অন্তর্ভুক্ত। হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের চিকিৎসার খরচও অনেক বেশি, যা এই পরিস্থিতিতে উদ্বেগের কারণ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই রোগের কারণে শুধু স্বাস্থ্যখাতে নয়, বরং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও বড় ধরনের প্রভাব পড়তে পারে। আক্রান্ত ব্যক্তির পরিবারের সদস্যরা অসুস্থ সন্তানের দেখাশোনার জন্য কর্মক্ষেত্রে যেতে পারছেন না, ফলে তাদের আয়ের ক্ষতি হচ্ছে। এছাড়াও, চিকিৎসা কেন্দ্রে যাতায়াতের খরচও বাড়ছে।
হাম একটি মারাত্মক রোগ, যা শিশুদের জন্য বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ। এটি কান সংক্রমণ, নিউমোনিয়া, মস্তিষ্কের প্রদাহ, এমনকি মৃত্যুর কারণও হতে পারে। টেক্সাসে ইতোমধ্যে হামের কারণে কয়েকজন শিশুর মৃত্যু হয়েছে এবং আরও অনেকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
আন্তর্জাতিকভাবে রোগ সংক্রমণের এই প্রবণতা একটি উদ্বেগের বিষয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো একত্রিত হয়ে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় পর্যাপ্ত তহবিল এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা খুবই জরুরি।
তথ্য সূত্র: সিএনএন