বিরলতম পেঙ্গুইন: গরমকে ভয় নয়, কীভাবে টিকে থাকে তারা?

পৃথিবীর সবচেয়ে বিরল পেঙ্গুইন, গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জের বাসিন্দা, উষ্ণতাকেও জয় করেছে। কিভাবে?

গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জ, যা ইকুয়েডরের উপকূল থেকে প্রায় ৬০০ মাইল দূরে অবস্থিত, সেখানে বাস করে পৃথিবীর সবচেয়ে বিরল প্রজাতির পেঙ্গুইন – গ্যালাপাগোস পেঙ্গুইন। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এই পেঙ্গুইনদের টিকে থাকার লড়াই সত্যিই এক দৃষ্টান্ত।

ডি বোয়ার্সমা নামের একজন সংরক্ষণ জীববিজ্ঞানী এই পেঙ্গুইনদের জীবনযাত্রা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা করছেন। তাঁর মতে, এই পাখির দল উষ্ণ জলবায়ুর সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিয়েছে এক বিশেষ উপায়ে।

গ্যালাপাগোস পেঙ্গুইনরা আকারে ছোট এবং এরা নিরক্ষীয় অঞ্চলে বাস করে। গরম আবহাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে নিতে তারা কিছু কৌশল অবলম্বন করে।

এদের প্রধান আশ্রয়স্থল হল দ্বীপের শীতল ও ছায়াযুক্ত স্থানগুলো, যেমন – ফাটল এবং লাভা টানেল। এই স্থানগুলো তাদের অতিরিক্ত গরম থেকে বাঁচতে সাহায্য করে।

এছাড়াও, তাদের শরীরে অন্যান্য পেঙ্গুইনের তুলনায় কম ফ্যাট এবং পালক থাকে। গরমের সময় তারা শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য হাঁপায় এবং তাদের পায়ের পাতা ও মুখের সাদা পালকগুলি শরীর থেকে তাপ নির্গত করতে সাহায্য করে।

গ্যালাপাগোস পেঙ্গুইনদের টিকে থাকার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল তাদের প্রজনন প্রক্রিয়া। অন্যান্য পেঙ্গুইন প্রজাতি যেখানে একটি নির্দিষ্ট সময়ে প্রজনন করে, সেখানে গ্যালাপাগোস পেঙ্গুইনরা খাদ্যের সহজলভ্যতা অনুযায়ী প্রজনন সময় পরিবর্তন করে।

যখন সমুদ্রের স্রোত ঠান্ডা ও পুষ্টিসমৃদ্ধ জল নিয়ে আসে, তখন তাদের খাদ্যের জোগান বাড়ে এবং তারা ডিম পাড়ে। অন্যদিকে, এল নিনোর কারণে উষ্ণ জলস্রোত এলে খাদ্যের অভাব দেখা দেয় এবং প্রজনন ব্যাহত হয়।

কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে গ্যালাপাগোস পেঙ্গুইনদের জীবন এখন হুমকির মুখে। উষ্ণতা বৃদ্ধি, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং এল নিনোর ঘন ঘন প্রভাবে তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা কঠিন হয়ে পড়েছে।

এছাড়াও, মানুষের আনা কিছু প্রাণী, যেমন – ইঁদুর ও বিড়াল, তাদের ডিম ও বাচ্চার ক্ষতি করে।

গ্যালাপাগোস ন্যাশনাল পার্ক এবং অন্যান্য সংস্থাগুলি এই পেঙ্গুইনদের বাঁচাতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হল, আক্রমণাত্মক প্রজাতি নির্মূল করা এবং কৃত্রিম বাসা তৈরি করা।

গবেষকরা মনে করেন, এই পদক্ষেপগুলির মাধ্যমে গ্যালাপাগোস পেঙ্গুইনদের বিলুপ্তি হয়তো ঠেকানো যেতে পারে। ড. বোয়ার্সমার মতে, বর্তমানে প্রায় ২,০০০ গ্যালাপাগোস পেঙ্গুইন টিকে আছে।

তাঁর বিশ্বাস, সঠিক পদক্ষেপ নিলে এই বিরল প্রজাতির পাখিদের বাঁচানো সম্ভব।

গ্যালাপাগোস পেঙ্গুইনদের নিয়ে গবেষণা শুধু একটি পাখির প্রজাতিকে বাঁচানোর বিষয় নয়, বরং এটি জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব এবং জীববৈচিত্র্য রক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ায়।

তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *