ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি হামলায় আহত এক শিশুর মর্মস্পর্শী ছবি ২০২৩ সালের বিশ্ব প্রেস ফটো পুরস্কার জিতেছে। ছবিটিতে দেখা যায়, নয় বছর বয়সী মাহমুদ আজ্জুর, যার দুটি হাতই হারানো গেছে।
ছবিটি তুলেছেন সামার আবু এলআউফ, যিনি নিউ ইয়র্ক টাইমসের হয়ে কাজ করেন। বৃহস্পতিবার এই পুরস্কার ঘোষণা করা হয়।
ছবিটি সম্পর্কে বলতে গিয়ে ফটোগ্রাফার আবু এলআউফ জানান, “মাহমুদের মা আমাকে বলেছিলেন, যখন প্রথমবার মাহমুদ জানতে পারে যে তার হাত নেই, তখন সে সবার প্রথমে জানতে চেয়েছিল, ‘আমি কীভাবে তোমাকে জড়িয়ে ধরব?'”
গত বছরের মার্চ মাসে গাজা সিটিতে ইসরায়েলি বোমা হামলায় মারাত্মকভাবে আহত হয় মাহমুদ। এরপর তাকে চিকিৎসার জন্য কাতারের দোহায় নেওয়া হয়।
গাজায় চলমান যুদ্ধে এ পর্যন্ত অন্তত ৫১ হাজার ২৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে এবং আহত হয়েছে প্রায় ১ লাখ ১৬ হাজার ৪৩২ জন। সেখানকার অধিকাংশ এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
বিশ্ব প্রেস ফটো কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক জৌমানা এল জেইন খৌরি বলেন, “এটি একটি নীরব ছবি, যা অনেক কথা বলে। এটি শুধু একটি ছেলের গল্প নয়, বরং একটি বৃহত্তর যুদ্ধের প্রতিচ্ছবি, যার প্রভাব প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চলবে।
বিচারকরা ছবিটির শক্তিশালী গঠন এবং আলোর প্রতি মনোযোগের প্রশংসা করেছেন। তারা বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন, ছবিটিতে কিভাবে একটি অঞ্চলের অমানবিক চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে এবং গাজায় সাংবাদিকদের উপর ক্রমাগত হামলার বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে।
একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক সাংবাদিকদের সেখানে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার বিষয়টিও তারা তুলে ধরেছেন।
বর্তমানে, মাহমুদ তার পা দিয়ে মোবাইল ফোনে গেম খেলতে, লিখতে এবং দরজা খুলতে শিখছে। তবে খাওয়া এবং পোশাক পরার মতো দৈনন্দিন কাজগুলোতে এখনো তার বিশেষ সাহায্য প্রয়োজন।
পুরস্কার আয়োজকদের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “মাহমুদের স্বপ্ন খুব সাধারণ: সে কৃত্রিম হাত লাগাতে চায় এবং অন্য শিশুদের মতো স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে চায়।” জাতিসংঘের ত্রাণ ও কর্মসংস্থান সংস্থা (UNWRA)-এর হিসাব অনুযায়ী, গত ডিসেম্বর পর্যন্ত গাজায় বিশ্বের অন্য যেকোনো স্থানের তুলনায় শিশু অঙ্গহানির ঘটনা বেশি ঘটেছে।
বিচারকরা আরও উল্লেখ করেছেন, “যুদ্ধ শিশুদের উপর অসামঞ্জস্যপূর্ণ প্রভাব ফেলে।
এছাড়াও, পুরস্কারের জন্য আরও দুটি ছবিকে রানার আপ হিসেবে নির্বাচন করা হয়েছে। প্রথমটি হলো আমাজনে খরা বিষয়ক ছবি, যা তুলেছেন মুসুক নোলতে।
দ্বিতীয় ছবিটি হলো, মার্কিন-মেক্সিকো সীমান্ত অতিক্রম করার সময় অভিবাসীদের কষ্টের ছবি, যা তুলেছেন জন মুর।
এ বছর বিশ্বজুড়ে ৩ হাজার ৭৭৮ জন ফটোসাংবাদিকের তোলা ৫৯ হাজার ৩২০টি ছবি থেকে বিজয়ী হিসেবে ৪২টি ছবি নির্বাচন করা হয়েছে। কেনিয়ার যুব বিদ্রোহের ছবি তুলে ‘গল্প’ বিভাগে আফ্রিকার জন্য পুরস্কার জিতেছেন লুইস তাতো।
এছাড়া, এশিয়া প্যাসিফিক ও ওশেনিয়া অঞ্চলের ‘একক ছবি’ বিভাগে পুরস্কার জিতেছেন জেরোম ব্রুইলেট। হাইতির গ্যাং সহিংসতার ছবি তুলে ‘গল্প’ বিভাগে উত্তর ও মধ্য আমেরিকার জন্য পুরস্কার জিতেছেন ক্লেরেন্স সিফ্রয়।
সবশেষে, ব্রাজিলের সালগাদো ফিলহো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আটকে পড়া একটি বোয়িং ৭২৭-২০০ বিমানের ছবি তুলে দক্ষিণ আমেরিকার ‘একক ছবি’ বিভাগে পুরস্কার জিতেছেন আনসেলমো কুন্হা।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা