আতঙ্কে ইউরো জোন! সুদের হার কমাচ্ছে ইসিবি?

ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক (ইসিবি) সুদের হার কমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে, যা বিশ্ব অর্থনীতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে চলেছে। এই সিদ্ধান্তের পেছনে মূল কারণ হলো, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের প্রস্তাব, যা বিশ্ব বাণিজ্যকে প্রভাবিত করতে পারে।

বৃহস্পতিবার ফ্রাঙ্কফুর্টে অনুষ্ঠিতব্য বৈঠকে এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসতে পারে।

**সুদের হার কমানোর কারণ ও প্রেক্ষাপট**

ইসিবি সাধারণত সুদের হার কমিয়ে ব্যবসা এবং ভোক্তাদের জন্য ঋণ আরও সহজলভ্য করে তোলে, যা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে উৎসাহিত করে। কিন্তু ট্রাম্পের শুল্ক প্রস্তাবের কারণে পরিস্থিতি ভিন্ন দিকে মোড় নিয়েছে।

গত ৬ মার্চ অনুষ্ঠিত ইসিবি’র বৈঠকে প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টিন ল্যাগার্দে সুদের হার কমানো ‘বন্ধ’ করার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। কিন্তু ২ এপ্রিল ট্রাম্পের প্রস্তাবিত নতুন শুল্কের কারণে সেই সম্ভাবনা কার্যত নস্যাৎ হয়ে যায়।

যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার। প্রতিদিন প্রায় ৪.৪ বিলিয়ন ইউরোর (প্রায় ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) পণ্য ও পরিষেবা আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দেয়।

ট্রাম্প যদি ইউরোপের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন, তাহলে ব্যবসা-বাণিজ্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ইউরোপীয় কমিশন এটিকে ‘বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক সম্পর্ক’ হিসেবে বর্ণনা করেছে।

বিশেষজ্ঞদের ধারণা, বৃহস্পতিবারের বৈঠকে ইসিবি তাদের বেঞ্চমার্ক সুদের হার ০.২৫ শতাংশ কমিয়ে ২.২৫ শতাংশ করতে পারে। এর আগে, ২০২২ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যাংকটি সুদের হার বাড়িয়েছিল।

বর্তমানে, মুদ্রাস্ফীতি কমে আসায় এখন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দিকে মনোযোগ দেওয়া হচ্ছে।

গত বছরের শেষ তিন মাসে ইউরোজোনের অর্থনীতি মাত্র ০.২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। মার্চ মাসে মুদ্রাস্ফীতি ছিল ২.২ শতাংশ, যা ইসিবি’র ২ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি।

**শুল্কের প্রভাব ও অনিশ্চয়তা**

ট্রাম্প যদিও ৯০ দিনের জন্য শুল্ক স্থগিত করেছেন, তবে এই অনিশ্চয়তা ব্যবসার জন্য বড় সমস্যা তৈরি করতে পারে। ব্যবসায়ীরা তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা স্থগিত করতে পারেন, যতক্ষণ না তারা তাদের সম্ভাব্য খরচ সম্পর্কে নিশ্চিত হচ্ছেন।

বেরেনবার্গ ব্যাংকের অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, বছরের মাঝামাঝি সময়ে কিছু শুল্ক আলোচনা করে কমানো হতে পারে এবং তা প্রায় ১২ শতাংশে দাঁড়াতে পারে। তবে, এটিও ট্রাম্পের আগের শুল্কের চেয়ে ১০ শতাংশ বেশি হবে।

এছাড়া, ইউরোপের অটো শিল্পের উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের প্রস্তাবও রয়েছে, যা এই শিল্পের জন্য একটি বড় আঘাত হতে পারে।

**বাংলাদেশের জন্য সম্ভাব্য প্রভাব**

ইউরোপীয় অর্থনীতির এই পরিবর্তন বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্ব অর্থনীতির এই অস্থিরতা বাংলাদেশের রপ্তানি বাজার, বিশেষ করে তৈরি পোশাক শিল্পের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।

এছাড়া, রেমিটেন্স প্রবাহেও এর প্রভাব পড়তে পারে। বিশ্ব অর্থনীতির এই পরিবর্তনের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে বাংলাদেশকে বাণিজ্য নীতি এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার দিকে আরও বেশি মনোযোগ দিতে হবে।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *