আতঙ্কে ইউরোপ! সুদের হার কমালো ইসিবি, কারণ?

ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক (ECB) চলতি বছরে আবারও সুদের হার কমিয়েছে। অর্থনৈতিক মন্দা এবং যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক নীতির কারণে তারা এই পদক্ষেপ নিয়েছে। বৃহস্পতিবার ব্যাংকটি তাদের প্রধান সুদের হার ২.২৫ শতাংশে নামিয়ে এনেছে, যা চলতি বছরে তাদের তৃতীয়বারের মতো সুদের হার কমানো।

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট-ভিত্তিক এই ব্যাংকটি মূলত ইউরোজোনের অর্থনৈতিক গতি কমে যাওয়া এবং সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপের প্রতিক্রিয়া হিসেবে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ব্যাংকটির গভর্নিং কাউন্সিল বলছে, বাণিজ্য ক্ষেত্রে অস্থিরতা বেড়ে যাওয়ায় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস আরও খারাপ হয়েছে। এর ফলে ব্যবসা এবং ভোক্তাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাসের অভাব দেখা দিতে পারে, যা ইউরোজোনের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির ওপর আরও চাপ সৃষ্টি করতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রধান অর্থনীতির দেশগুলোর কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোও এই বছর সুদের হার কমাতে পারে। কারণ শুল্ক নীতি বিশ্ব বাণিজ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে ধীর করে দিচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, ব্যাংক অফ ইংল্যান্ড (Bank of England) তাদের নীতি নির্ধারকদের পরবর্তী বৈঠকে সুদের হার কমাতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এই পরিস্থিতিতে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের পরিসংখ্যান সংস্থা ইউরোস্ট্যাট (Eurostat) -এর তথ্য অনুযায়ী, মার্চ মাসে ইউরোজোনে মুদ্রাস্ফীতি ২.২ শতাংশে পৌঁছেছে, যা ফেব্রুয়ারিতে ছিল ২.৩ শতাংশ। তবে খাদ্য ও জ্বালানির মতো অস্থির উপাদানগুলো বাদ দিলে, মূল মুদ্রাস্ফীতি ফেব্রুয়ারির ২.৬ শতাংশ থেকে কমে ২.৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভের প্রধান জ্যারোম পাওয়েল (Jerome Powell) বুধবার বলেছেন, প্রায় ৬০টি দেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপের ফলে অভ্যন্তরীণ বাজারে দাম বাড়বে এবং কর্মী নিয়োগের হার কমতে পারে। শিকাগোর ইকোনমিক ক্লাবে তিনি আরও বলেন, এর সামগ্রিক প্রভাব সম্পর্কে এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি এবং পরিস্থিতি মোকাবিলায় ব্যাংককে সুদের হার বাড়ানো বা কমানোর প্রয়োজন হতে পারে।

যদিও ইসিবি’র এই সিদ্ধান্তের সরাসরি প্রভাব বাংলাদেশের ওপর তাৎক্ষণিকভাবে নাও পড়তে পারে, তবে বিশ্ব অর্থনীতির প্রেক্ষাপটে এর কিছু পরোক্ষ প্রভাব থাকতে পারে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থনৈতিক মন্দা বাংলাদেশের বাণিজ্য, বিশেষ করে রপ্তানি খাতে প্রভাব ফেলতে পারে। এছাড়া, বিশ্ব অর্থনীতির এই পরিস্থিতিতে বিনিয়োগ এবং বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় হারেও পরিবর্তন আসতে পারে।

সুতরাং, ইসিবি’র এই পদক্ষেপ বিশ্ব অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক, যা বাংলাদেশকে বিশ্ব বাজারের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে নিজেদের নীতি নির্ধারণ করতে সাহায্য করতে পারে।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *