বাংলাদেশের সঙ্গীত জগতে, বিশেষ করে স্বাধীন ধারার শিল্পী এবং প্রতিবাদী গানের অনুরাগী, তাঁদের কাছে আনি ডিফ্রাঙ্কো একটি সুপরিচিত নাম। তাঁর গান শুধু সুরের মূর্ছনা নয়, বরং সমাজের বিভিন্ন অসঙ্গতি ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে এক শক্তিশালী প্রতিবাদের কণ্ঠস্বর।
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে ডিফ্রাঙ্কো তাঁর শিল্পী জীবন, সঙ্গীত, এবং সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা নিয়ে কথা বলেছেন। সেই আলোচনা থেকেই উঠে এসেছে তাঁর দীর্ঘ পথচলার নানা দিক।
আনি ডিফ্রাঙ্কোর জন্ম আমেরিকার নিউ ইয়র্কের বাফেলো শহরে। কৈশোরেই তিনি সঙ্গীতের প্রতি আকৃষ্ট হন। ১৫ বছর বয়সে তিনি ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন এবং সঙ্গীতকে পেশা হিসেবে বেছে নেন।
বাফেলোর সঙ্গীত জগতে বেড়ে ওঠা এবং সেখানকার কফি হাউজগুলোতে গান করার অভিজ্ঞতা তাঁকে সঙ্গীত ও সমাজের প্রতি আরও গভীর ভাবে আগ্রহী করে তোলে। ডিফ্রাঙ্কো সবসময়ই প্রচলিত ধারণার বাইরে গিয়ে কাজ করতে চেয়েছেন। তিনি কখনো কোনো বৃহৎRecord Label-এর সঙ্গে যুক্ত হননি, বরং নিজের স্বাধীনতা বজায় রেখে স্বাধীনভাবে গান তৈরি করেছেন।
নব্বইয়ের দশকে ডিফ্রাঙ্কো লন্ডনে যান এবং সেখানকার সঙ্গীত জগতে পরিচিতি লাভ করেন। সেই সময়ে মিডিয়া তাঁকে “রাগি, রুক্ষ, নারী অধিকার কর্মী” হিসেবে চিহ্নিত করত।
কিন্তু লন্ডনে, তাঁর গানের প্রতি শ্রোতাদের আগ্রহ ছিল অনেক বেশি স্বতঃস্ফূর্ত। কারণ সেখানে তাঁর সম্পর্কে আগে থেকে কোনো ধারণা তৈরি করা হয়নি। শ্রোতারা নিজেদের মতো করে তাঁর গানগুলো উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন। ডিফ্রাঙ্কোর মতে, একটি ভালো গানের আসল উদ্দেশ্য হল শ্রোতাদের শক্তিশালী এবং সজীব অনুভব করানো।
নারী অধিকারের প্রশ্নে ডিফ্রাঙ্কো সবসময় সোচ্চার। তাঁর মতে, সমাজে নারীদের অধিকার এখনো পর্যন্ত সম্পূর্ণভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়নি। তিনি বিশ্বাস করেন, বিভিন্ন সংস্কৃতি, অর্থনৈতিক অবস্থা এবং জাতিগত বিভেদ ভুলে নারীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়া উচিত।
ডিফ্রাঙ্কো মনে করেন, শিল্পী হিসেবে সমাজের প্রতি তাঁর দায়বদ্ধতা রয়েছে। তিনি গান লেখার পাশাপাশি বিভিন্ন আন্দোলনেও সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। তাঁর মতে, বর্তমান সময়ে গণতন্ত্র, নারী অধিকার, এবং পরিবেশের জন্য শিল্পীদের আরও বেশি সোচ্চার হওয়া উচিত।
নিজের শিল্পী জীবনের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে ডিফ্রাঙ্কো বলেন, একজন শিল্পী হিসেবে তাঁর কাজের মূল্যায়ন সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তিত হতে পারে। তবে তিনি সবসময় নতুন কিছু করার চেষ্টা করেন।
তাঁর মতে, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নারীদের মূল্যায়নে কোনো পরিবর্তন আসে না, যতক্ষণ না তাঁরা পুরুষতান্ত্রিক সমাজের অনুমোদন পেতে চেষ্টা করেন।
আনি ডিফ্রাঙ্কোর মতে, অন্য শিল্পকলার কাজ তাঁকে নতুন গান লিখতে অনুপ্রাণিত করে। তাঁর মতে, সঙ্গীতের জগতে সমালোচনা এবং কোলাহল অনেক থাকলেও, একজন শিল্পীর আসল কাজ হল নিজের সৃষ্টিশীলতাকে বাঁচিয়ে রাখা।
আনি ডিফ্রাঙ্কো তাঁর গানের মাধ্যমে সবসময় সমাজের দুর্বল এবং নিপীড়িত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তিনি সবসময় চেয়েছেন তাঁর গান যেন মানুষের মধ্যে সাহস ও উদ্দীপনা যোগায়।
তথ্য সূত্র: The Guardian