কাজের চাপে মানসিক স্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা বাড়ছে বিশ্বজুড়ে, এবং এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা এখন আরও বেশি প্রাসঙ্গিক। কর্মক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্যের কথা উঠলে ছুটি নেওয়ার বিষয়টিও আসে, যা অনেকের কাছেই অজানা।
সম্প্রতি একটি আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা এই বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যেখানে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক ছুটি নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা এবং এর সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের একজন বিপণনকর্মী ক্যারোলিনা ল্যাসো, অফিসের একটি মিটিংয়ে বক্তৃতা দেওয়ার সময় হঠাৎ করেই মানসিক উদ্বেগে পড়েন। তিনি জানান, কথা বলতে পারছিলেন না, শ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছিল। এই ঘটনার পর তিনি মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক ছুটি নেওয়ার কথা ভাবেন।
প্রথমে দ্বিধা বোধ করলেও পরে তিনি ছুটি নেন এবং এর মাধ্যমে সুস্থ হয়ে ওঠেন।
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক ছুটি শুধু যে কর্মীদের জন্য উপকারী, তাই নয়, অনেক সংস্থাও এখন তাদের কর্মীদের মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টি গুরুত্ব দিচ্ছে।
কর্মীদের মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টি ভালো রাখতে পারলে, কর্মীরা কাজের প্রতি আরও মনোযোগী হতে পারে এবং উৎপাদনশীলতাও বাড়ে। মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক ছুটি কর্মীদের মানসিক চাপ কমাতে এবং তাদের সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করে।
এই প্রসঙ্গে, গুগলের স্বাস্থ্য ও কর্মক্ষমতা বিষয়ক পরিচালক নিউটন চেং তাঁর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন।
তিনি জানান, কর্মক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্যের কথা বলতে তাঁর দ্বিধা ছিল। তবে, তিনি যখন তাঁর মানসিক কষ্টের কথা সহকর্মীদের সঙ্গে শেয়ার করেন, তখন অনেকেই তাঁদের ব্যক্তিগত সমস্যার কথা জানান। এরপর তিনি মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক ছুটি নেন।
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক ছুটি নেওয়ার প্রক্রিয়া বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন রকম হতে পারে।
সাধারণত, গুরুতর স্বাস্থ্যগত সমস্যায় আক্রান্ত কর্মীদের জন্য এই ধরনের ছুটির ব্যবস্থা থাকে। অনেক সংস্থায় অসুস্থতাজনিত ছুটির মতোই মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক ছুটি পাওয়া যায়।
কেউ কেউ স্বল্প সময়ের জন্য বিরতি নেওয়ার সুযোগ পান, আবার কারো কারো জন্য দীর্ঘমেয়াদি ছুটির প্রয়োজন হয়।
বাংলাদেশে যদিও মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক ছুটির ধারণা এখনো সেভাবে প্রচলিত নয়, তবে কর্মীদের মানসিক স্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দেওয়া জরুরি।
কর্মীদের মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকলে, কর্মক্ষেত্রে তাঁদের পারফরম্যান্স বাড়ে এবং কাজের পরিবেশও উন্নত হয়। অনেক সময় দেখা যায়, কর্মীরা মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সমস্যার কারণে কাজে মনোযোগ দিতে পারেন না, যা তাঁদের ব্যক্তিগত এবং পেশাগত জীবনে খারাপ প্রভাব ফেলে।
যদি কোনো কর্মী মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সমস্যায় ভোগেন, তবে তাঁর জন্য পর্যাপ্ত বিশ্রাম এবং চিকিৎসা প্রয়োজন।
এক্ষেত্রে, কর্তৃপক্ষের উচিত হবে কর্মীদের মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক ছুটি মঞ্জুর করা এবং তাঁদের পাশে থাকা। মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক ছুটি কর্মীদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতে সাহায্য করতে পারে এবং তাঁদের কর্মজীবনে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করতে পারে।
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক ছুটি সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং কর্মক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দেওয়া এখন সময়ের দাবি।
কর্মীদের মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে পারলে, একটি সুস্থ কর্মপরিবেশ তৈরি করা সম্ভব, যা দেশের উন্নয়নেও সহায়তা করবে।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস