ইউক্রেন যুদ্ধ: চীনের অস্ত্র সরবরাহ নিয়ে মুখ খুললেন প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি।
ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার প্রতি অস্ত্র সরবরাহের গুরুতর অভিযোগ এনেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তিনি জানিয়েছেন, রাশিয়াকে গোলাবারুদ ও আর্টিলারি সহ বিভিন্ন ধরণের অস্ত্র সরবরাহ করছে চীন।
বৃহস্পতিবার (আজ) জেলেনস্কি এ কথা জানান। ইউক্রেনের নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর প্রতিবেদনের ভিত্তিতে তিনি এই মন্তব্য করেন।
জেলেনস্কি বলেন, “আমরা বিস্তারিতভাবে এই বিষয়ে কথা বলতে প্রস্তুত। আগামী সপ্তাহে আমরা আমাদের দাবির সমর্থনে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পেশ করব।” তিনি আরও যোগ করেন, “আমরা অবশেষে তথ্য পেয়েছি যে চীন রাশিয়ান ফেডারেশনে অস্ত্র সরবরাহ করছে।
আমরা বিশ্বাস করি যে চীনা প্রতিনিধিরা রাশিয়ার ভূখণ্ডে কিছু অস্ত্রের উৎপাদনে জড়িত… আমরা এই অঞ্চলে এই দুটি দেশের মধ্যে সহযোগিতা দেখছি এবং আমাদের এটি স্বীকার করতে হবে।
তবে, জেলেনস্কির এই অভিযোগের বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি চীন। যদিও এর আগে, ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহের অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করেছে বেইজিং।
এদিকে, ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে রাশিয়ার সামরিক অভিযান অব্যাহত রয়েছে। বৃহস্পতিবার খারকিভে চালানো ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
শহরটির মেয়র ইগর তেরেকভ জানিয়েছেন, রুশ হামলায় আবাসিক ভবনগুলোর ১৫টিরও বেশি ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া, সীমান্তবর্তী সুমি শহরে একটি ড্রোন হামলায় একজন নিহত এবং একজন আহত হয়েছে।
যুদ্ধ পরিস্থিতি মোকাবেলায় কূটনৈতিক তৎপরতাও চলছে। আগামী সপ্তাহে লন্ডনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
এতে যুদ্ধ বন্ধের বিষয়ে আলোচনা হতে পারে। ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যাঁ-নয়েল বারোট জানিয়েছেন, “যুক্তরাষ্ট্র, ইউক্রেন এবং ইউরোপীয় দেশগুলো একই টেবিলে বসেছে।”
প্যারিসে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে ফ্রান্স, জার্মানি, ব্রিটেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা মিলিত হয়েছিলেন।
অন্যদিকে, ইউক্রেনের অর্থনীতি বিষয়ক মন্ত্রী ইউলিয়া সুইরিদেনকো জানিয়েছেন, কিয়েভ ইউক্রেন পুনর্গঠনের জন্য ওয়াশিংটনের সঙ্গে একটি “ইচ্ছা স্মারক” স্বাক্ষর করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে খুব শীঘ্রই এর কার্যক্রম শুরু হবে।
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদেও ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সেখানে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত ভ্যাসিলি নেবেনজিয়া ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ করেছেন।
তবে স্লোভেনিয়া, ডেনমার্ক, ফ্রান্স, গ্রিস এবং ব্রিটেনের পক্ষ থেকে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি ঘোষণার জন্য রাশিয়ার প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
স্লোভেনিয়ার রাষ্ট্রদূত স্যামুয়েল জবোকার বলেছেন, “ইউক্রেন শান্তি চায় এবং পাঁচ সপ্তাহ আগে একটি সম্পূর্ণ, তাৎক্ষণিক এবং শর্তহীন যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে রাজি হয়ে তা প্রমাণ করেছে।
যুদ্ধ পরিস্থিতিতে মানবিক সংকট আরও বাড়ছে। খারকিভ ও সুমিতে রাশিয়ার হামলায় হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।
রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় খারকিভে নিহত হয়েছেন দুইজন, আহত হয়েছেন অন্তত ২৭ জন।
যুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আন্তর্জাতিক মহলের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। তবে, রাশিয়া এবং চীনের মধ্যে অস্ত্র সরবরাহ নিয়ে আসা অভিযোগ এই সংকটকে আরও গভীর করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান।