চীনকে চ্যালেঞ্জ! জাহাজ খাতে নতুন মাশুল, যুক্তরাষ্ট্রের চাঞ্চল্যকর সিদ্ধান্ত

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চীন থেকে আসা জাহাজগুলোর উপর নতুন শুল্ক আরোপ করতে যাচ্ছে। এর মূল উদ্দেশ্য হলো দেশের জাহাজ নির্মাণ শিল্পকে উৎসাহিত করা এবং এই খাতে চীনের একচেটিয়া আধিপত্য কমানো।

সম্প্রতি এই ঘোষণা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের জগতে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে।

মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, নতুন এই শুল্ক চীনের তৈরি এবং চীন কর্তৃক পরিচালিত জাহাজগুলোর উপর ধার্য করা হবে। এই পদক্ষেপের ফলে, জাহাজগুলোকে তাদের ওজন এবং কন্টেইনারের ধারণক্ষমতা অনুযায়ী নির্দিষ্ট পরিমাণ ফি দিতে হবে।

উদাহরণস্বরূপ, চীন থেকে নির্মিত একটি জাহাজে যদি ১৫,০০০ কন্টেইনার থাকে, তাহলে সেই জাহাজটিকে প্রায় ১.৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ফি দিতে হতে পারে। এই ফি বছরে সর্বোচ্চ পাঁচবার ধার্য করা হবে।

তবে, যদি কোনো জাহাজ মালিক যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি জাহাজ ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নেন, তাহলে এই ফি মওকুফ করা হতে পারে।

বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপ চীন-মার্কিন বাণিজ্য যুদ্ধের একটি অংশ। উভয় দেশই বর্তমানে বাণিজ্য ঘাটতি এবং শুল্ক আরোপের মতো বিষয়গুলো নিয়ে দ্বন্দ্বে লিপ্ত।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর একসময় জাহাজ নির্মাণ শিল্পে যুক্তরাষ্ট্রের একচেটিয়া আধিপত্য ছিল। কিন্তু বর্তমানে বিশ্বে এই শিল্পে চীনের অবস্থান অনেক শক্তিশালী।

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে চীন একাই বিশ্বের প্রায় অর্ধেক জাহাজ তৈরি করে। এরপরই রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের অবস্থান।

এই তিনটি দেশ মিলে বিশ্বের প্রায় ৯৫ শতাংশ বাণিজ্যিক জাহাজ তৈরি করে থাকে।

এই নতুন শুল্কের কারণে, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে আমদানি করা পণ্যের দাম বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি শিল্প সংগঠন এই বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

তারা মনে করছেন, চীনের উপর আরোপিত শুল্ক এবং অন্যান্য বাণিজ্য বিধিনিষেধের পাশাপাশি এই নতুন ফি যুক্তরাষ্ট্রের খুচরা বিক্রেতাদের উপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করবে।

শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে তৈরি হওয়া কার্গো জাহাজ এবং তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) বহনকারী জাহাজের ক্ষেত্রেও এই ফি প্রযোজ্য হবে।

তবে, কিছু ক্ষেত্রে এই শুল্কের আওতা শিথিল করা হয়েছে, যেমন – যুক্তরাষ্ট্রের গ্রেট লেকস অথবা ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের জাহাজ চলাচল অথবা যুক্তরাষ্ট্রের ভূখণ্ডের মধ্যে পণ্য পরিবহন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পদক্ষেপের ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিভিন্ন ধরনের প্রভাব পড়তে পারে। কারণ, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে অস্থিরতা দেখা দিতে পারে।

বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যেও এর প্রভাব পড়তে পারে। বিশেষ করে, চীন থেকে আমদানি করা পণ্যের দাম বাড়লে, তা দেশের বাজারেও প্রভাব ফেলবে।

তাই, বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকদের এই পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং দেশের স্বার্থ রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।

তথ্য সূত্র: The Guardian

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *