বর্তমান ডিজিটাল যুগে, স্মার্টফোন আর ইন্টারনেটের সহজলভ্যতার কারণে আমাদের জীবনযাত্রা অনেক সহজ হয়েছে, সন্দেহ নেই। তবে এর পাশাপাশি বাড়ছে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক কিছু সমস্যা।
অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইমের কারণে উদ্বেগে ভোগা, মনোযোগের অভাব, এমনকি মানসিক অবসাদও আজকাল বেশ পরিচিত সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই পরিস্থিতিতে, মনকে শান্ত রাখতে এবং স্ক্রিন থেকে দূরে থাকতে কিছু বিকল্প খুঁজে বের করা জরুরি।
আজকের লেখায় আমরা আলোচনা করবো এমন কিছু স্ক্রিন-মুক্ত কার্যক্রম নিয়ে, যা আপনার মনকে শান্ত করতে, প্রকৃতির সান্নিধ্যে যেতে এবং বর্তমান মুহূর্তের প্রতি মনোযোগী হতে সাহায্য করবে।
১. বাগান করা (Gardening):
প্রকৃতির কাছাকাছি যাওয়া সবসময়ই মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। বাগান করা শুধু গাছ লাগানো বা পরিচর্যা করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, এটি মনকে শান্ত করতে এবং বর্তমানের প্রতি মনোযোগ দিতেও সহায়তা করে।
* ছাদে বাগান করা: শহরে বসবাসকারীদের জন্য এটি একটি দারুণ উপায়। বিভিন্ন ধরনের সবজি, ফল এবং ফুলের গাছ লাগিয়ে আপনি আপনার ছাদকে সবুজে ভরিয়ে তুলতে পারেন।
* আঙ্গিনায় বাগান করা: যাদের বাড়ির আঙিনা আছে, তারা সেখানে ফুল, ফল ও সবজির বাগান করতে পারেন। স্থানীয় নার্সারিগুলোতে বিভিন্ন ধরনের গাছের চারা পাওয়া যায়।
২. ছবি আঁকা ও রং করা (Coloring & Drawing):
ছবি আঁকা বা রং করা শিশুদের মতো বড়দেরও মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। বাজারে প্রাপ্ত বিভিন্ন ধরনের রঙিন খাতা ও সরঞ্জাম ব্যবহার করে আপনি আপনার সৃজনশীলতাকে কাজে লাগাতে পারেন।
* রঙিন পেন্সিল ও মার্কার: আপনার পছন্দের ছবি আঁকা বা রং করার জন্য ভালো মানের রঙিন পেন্সিল ও মার্কার ব্যবহার করতে পারেন।
* প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য রঙিন বই: বাজারে বিভিন্ন ধরনের নকশা ও চিত্রের রঙিন বই পাওয়া যায়, যা আপনার মনকে শান্ত করতে সাহায্য করবে।
৩. পাখি পর্যবেক্ষণ (Birdwatching):
প্রকৃতির কাছাকাছি সময় কাটানোর চমৎকার একটি উপায় হলো পাখি পর্যবেক্ষণ। আশেপাশে ঘুরে বেড়ানো পাখিদের দেখা এবং তাদের আচরণ পর্যবেক্ষণ করা মনকে শান্ত করে।
* স্থানীয় পাখির প্রজাতি: বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরনের পাখির দেখা মেলে। তাদের ছবি তোলার মাধ্যমে অথবা তাদের সম্পর্কে জানার চেষ্টা করতে পারেন।
* বার্ড ওয়াচিং ক্লাব: পাখি পর্যবেক্ষণে আগ্রহী হলে স্থানীয় বার্ড ওয়াচিং ক্লাবে যোগ দিতে পারেন।
৪. পাজল (Jigsaw Puzzles):
পাজল বা ধাঁধা সমাধান করা মস্তিষ্কের জন্য খুবই উপকারী। এটি মনোযোগ বাড়াতে এবং মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।
* বিভিন্ন ধরনের পাজল: বাজারে বিভিন্ন ধরনের পাজল পাওয়া যায়, যেমন – ছবিযুক্ত পাজল, শব্দজট ইত্যাদি। আপনার পছন্দের বিষয় অনুযায়ী পাজল বেছে নিতে পারেন।
* পারিবারিকভাবে পাজল: পরিবারের সবাই মিলে পাজল সমাধান করা একটি মজাদার অভিজ্ঞতা হতে পারে।
৫. যোগা ও ব্যায়াম (Yoga & Exercise):
নিয়মিত যোগা ও ব্যায়াম করলে মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকে। এটি মনকে শান্ত করে এবং শরীরের কর্মক্ষমতা বাড়ায়।
* ঘরের বাইরে যোগা: খোলা জায়গায়, যেমন – পার্ক বা আপনার বাড়ির ছাদে যোগাভ্যাস করতে পারেন।
* নিয়মিত শরীরচর্চা: সকালে বা বিকেলে হাঁটা, দৌড়ানো অথবা সাঁতারের মতো শারীরিক কার্যকলাপ করতে পারেন।
৬. জার্নালিং বা দিনলিপি লেখা (Journaling):
প্রতিদিনের অনুভূতি, চিন্তা এবং অভিজ্ঞতা লিখে রাখা মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। এটি আত্ম-সচেতনতা বাড়াতে এবং মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।
* কৃতজ্ঞতা প্রকাশ: প্রতিদিনের ভালো ঘটনাগুলো লিখে আপনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারেন।
* নিজের অনুভূতি প্রকাশ: আপনার মনের কথাগুলো একটি ডায়েরিতে লিখে রাখুন।
উপরে উল্লেখিত কার্যক্রমগুলো আপনার দৈনন্দিন জীবনে যোগ করে আপনি স্ক্রিন থেকে দূরে থাকতে পারেন এবং মানসিক শান্তি খুঁজে পেতে পারেন।
এছাড়াও, বই পড়া, গান শোনা, বন্ধুদের সাথে সময় কাটানো এবং পরিবারের সাথে খেলাধুলা করার মতো আরও অনেক কিছুই করতে পারেন।
আজই শুরু করুন, আপনার মানসিক স্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দিন এবং স্ক্রিন-মুক্ত জীবনের আনন্দ উপভোগ করুন!
তথ্য সূত্র: The Guardian