যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেন: মার্কিন সমর্থন হ্রাস পেলে কি পারবে ইউরোপ?
ইউক্রেন যুদ্ধের ভবিষ্যৎ নিয়ে বর্তমানে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। একদিকে যখন রাশিয়ার আগ্রাসন বাড়ছে, তখন শোনা যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র হয়তো তাদের সমর্থন কমিয়ে দিতে পারে।
এমন পরিস্থিতিতে ইউরোপের দেশগুলো কি পারবে ইউক্রেনকে সাহায্য করতে? এই বিষয়ে বিশিষ্টজনদের মতামত জানতে চায় আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম আল জাজিরা।
সেন্ট অ্যান্ড্রুজ বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রধান এবং ইউক্রেন বিষয়ক বিশ্লেষক ফিলিপস ও’ব্রায়েন মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি ইউক্রেন থেকে সমর্থন তুলে নেয়, সেক্ষেত্রেও ইউরোপের দেশগুলো পারবে ইউক্রেনকে সাহায্য চালিয়ে যেতে।
তবে এর জন্য প্রয়োজন হবে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা এবং বিপুল পরিমাণ অর্থ ও প্রযুক্তির যোগান।
ও’ব্রায়েনের মতে, ইউরোপের দেশগুলোর হাতে বর্তমানে ইউক্রেনকে সাহায্য করার মতো যথেষ্ট সম্পদ রয়েছে। তাদের কাছে সামরিক সরঞ্জামও আছে, যা যুদ্ধের মোড় ঘোরাতে সাহায্য করতে পারে।
তবে এক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ইউরোপীয় দেশগুলোকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এবং তাদের মধ্যে রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকতে হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইউক্রেন বর্তমানে কঠিন সময় পার করছে। একদিকে যেমন রাশিয়ার সামরিক শক্তি বাড়ছে, তেমনই যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সামরিক ও আর্থিক সহায়তা কমে আসার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে ইউক্রেনের জন্য শান্তি আলোচনা শুরু করার জন্য চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। তবে, ও’ব্রায়েন মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি রাশিয়াকে সমর্থন করে, তাহলে ইউক্রেন এবং ইউরোপের জন্য তা মারাত্মক ক্ষতির কারণ হবে।
অন্যদিকে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানিয়েছেন, চলতি বছর তিনি ৩০ হাজার দূরপাল্লার ড্রোন এবং ৩ হাজার ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করতে চান।
ও’ব্রায়েনের মতে, যদি ইউক্রেন এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারে, তাহলে তা রাশিয়ার সামরিক এবং সরবরাহ ব্যবস্থার উপর মারাত্মক চাপ সৃষ্টি করবে।
যুক্তরাষ্ট্র যদি তাদের সমর্থন প্রত্যাহার করে নেয়, সেক্ষেত্রে ইউরোপের নিরাপত্তা মারাত্মকভাবে ঝুঁকির মুখে পড়বে।
ও’ব্রায়েন মনে করেন, এমন পরিস্থিতিতে ইউক্রেনের নিরাপত্তা ইউরোপের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। কারণ, ইউক্রেনই পারে রাশিয়াকে ইউরোপের জন্য হুমকি হতে বাধা দিতে।
তবে, ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে এই বিষয়ে মতানৈক্য রয়েছে। কেউ কেউ দ্রুত পদক্ষেপ নিতে চাইছে, আবার অনেকে এখনো দ্বিধাগ্রস্ত।
বিশেষজ্ঞদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়টি আগে থেকেই অনুধাবন করা উচিত ছিল ইউরোপের, কিন্তু নেতৃত্ব সে বিষয়ে ব্যর্থ হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র যদি তাদের সমর্থন কমিয়ে দেয়, সেক্ষেত্রে ইউরোপকে নিজস্ব সক্ষমতা বাড়াতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ এবং সামরিক প্রযুক্তির উন্নয়ন।
কারণ, বর্তমানে ইউরোপীয় দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রের উপর গোয়েন্দা তথ্যের জন্য নির্ভরশীল।
আর্থিক সহায়তার পাশাপাশি, ইউরোপকে সামরিক সরঞ্জাম এবং প্রশিক্ষণেও ইউক্রেনকে সাহায্য করতে হবে। এছাড়া, রাশিয়ার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য একটি শক্তিশালী জোট গঠন করতে হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ইউক্রেন যুদ্ধের ফলাফল শুধু ইউক্রেনের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং এটি ইউরোপের নিরাপত্তা এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের উপরও গভীর প্রভাব ফেলবে।
এই পরিস্থিতিতে ইউরোপের দেশগুলোকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে এবং তাদের সক্ষমতা প্রমাণ করতে হবে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা