আলোড়ন সৃষ্টিকারী: প্রথম শ্রবণ প্রতিবন্ধী কে-পপ ব্যান্ড, আসছে দ্বিতীয় অ্যালবাম!

বিশ্বের প্রথম শ্রবণ প্রতিবন্ধী কোরিয়ান পপ ব্যান্ড ‘বিগ ওশান’: প্রতিকূলতাকে জয় করে নতুন দিগন্তের সূচনা।

দক্ষিণ কোরিয়ার একটি ব্যান্ড দল, যারা তাঁদের বিশেষত্বের জন্য বিশ্বজুড়ে পরিচিতি লাভ করেছেন। এই ব্যান্ডের প্রত্যেক সদস্যই শ্রবণ প্রতিবন্ধী। তাঁদের নাম ‘বিগ ওশান’। সম্প্রতি, তাঁরা তাঁদের সাফল্যের এক বছর উদযাপন করেছেন এবং দ্বিতীয় অ্যালবাম প্রকাশের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এমন একটি সমাজে যেখানে ভিন্নতাকে সহজে গ্রহণ করা হয় না, সেখানে তাঁদের এই যাত্রা সত্যিই প্রশংসার যোগ্য।

বিগ ওশানের সদস্যরা হলেন: পিজে, যিনি মূল কণ্ঠশিল্পী, চানইয়ন এবং জিসোক। তাঁদের সাফল্যের মূল মন্ত্র হল, প্রতিকূলতাকে জয় করে এগিয়ে যাওয়া এবং অন্যদের অনুপ্রাণিত করা। পিজে বলেন, “অনেকেই আমাদের কিভাবে শুনতেই না পাওয়া সত্ত্বেও একটি কে-পপ দল হতে পারি, সেই বিষয়ে প্রশ্ন করেন। আমরা চাই, আমাদের পারফর্ম্যান্স দেখে মানুষ অনুপ্রাণিত হোক এবং আমাদের শ্রবণ প্রতিবন্ধকতাকে তারা একটি গৌণ বিষয় হিসেবে দেখুক।”

এই ব্যান্ডের সদস্যরা বিভিন্ন ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে এসেছেন। জিসোক, যিনি দলের প্রধান নৃত্যশিল্পী, শৈশবকালে শ্রবণশক্তি হারান এবং এখন হিয়ারিং এইড ব্যবহার করেন। পিজে, যিনি একজন ইউটিউবার ছিলেন, শৈশবে অসুস্থতার কারণে শ্রবণশক্তি হারান। তিনি একটি কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট এবং হিয়ারিং এইড ব্যবহার করেন। চানইয়ন, যিনি দলের সবচেয়ে বয়স্ক সদস্য, কোরিয়া ইউনিভার্সিটি আনাম হাসপাতালে অডিওলজিস্ট হিসেবে কাজ করতেন। তিনিও শৈশবে শ্রবণশক্তি হারান এবং কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্টের মাধ্যমে শ্রবণক্ষমতা ফিরে পান।

তাঁদের যাত্রা সহজ ছিল না। সঙ্গীতের সঙ্গে তাল মেলানোর জন্য তাঁরা বিশেষ কিছু পদ্ধতির সাহায্য নেন। এর মধ্যে রয়েছে, সঙ্গীতের তালে আলো জ্বলে এমন মেট্রোনোম ব্যবহার করা, ভাইব্রেটিং স্মার্টওয়াচ এবং ভিজ্যুয়াল ডিসপ্লে। কণ্ঠের ক্ষেত্রে, তাঁরা এআই বিশেষজ্ঞের সাহায্য নেন, যা তাঁদের পারফর্ম্যান্সকে আরও উন্নত করতে সহায়তা করে।

বিগ ওশানের গানগুলো মূলত আশা, ঐক্য এবং আত্মবিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়। তাঁদের প্রথম গান ‘গ্লো’-এর মাধ্যমে তাঁরা শ্রোতাদের একটি সুন্দর ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখতে উৎসাহিত করেন। তাঁদের আসন্ন দ্বিতীয় অ্যালবাম ‘আন্ডারওয়াটার’-এ তাঁরা নিজেদের ভেতরের শক্তি আবিষ্কারের গল্প তুলে ধরবেন।

বিগ ওশানের সাফল্যের পেছনে তাঁদের ভক্তদের অবদান অনস্বীকার্য। ভক্তদের ‘পাদো’ নামে ডাকা হয়। পিজে বলেন, “ভক্তরা আমাদের খুব সমর্থন করেন। তাঁদের অনুপ্রেরণা আমাদের এগিয়ে যেতে সাহায্য করে।” তাঁদের গানগুলি শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে সাফল্যের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

বিগ ওশানের ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি ‘প্যারাস্টার এন্টারটেইনমেন্ট’-এর প্রধান হ্যালি চা-এর মতে, তাঁরা চান বিগ ওশান যেন বিশ্বজুড়ে পরিচিতি লাভ করে এবং প্রতিবন্ধী শিল্পীদের সম্পর্কে প্রচলিত ধারণা পরিবর্তন করতে পারে।

আগামী ১৯শে এপ্রিল সুইজারল্যান্ডের লুসানে তাঁদের ইউরোপীয় সফর শুরু হবে। বর্তমানে এই ব্যান্ড দল বিশ্বজুড়ে তাঁদের ভক্তদের জন্য নতুন কিছু উপহার দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *