জাপানের ইজু উপদ্বীপ: যেখানে প্রকৃতির অপরূপ শোভা আর ঐতিহ্য মিলেমিশে একাকার।
জাপান ভ্রমণে যারা প্রকৃতির মনোমুগ্ধকর দৃশ্য আর স্থানীয় সংস্কৃতির স্বাদ নিতে ভালোবাসেন, তাদের জন্য ইজু উপদ্বীপ হতে পারে এক দারুণ গন্তব্য। এখানকার সবুজ পাহাড়, স্বচ্ছ জলের ধারা, আর সমুদ্রের কাছাকাছি অবস্থিত মনোরম দৃশ্য ভ্রমণকারীদের মন জয় করে।
সম্প্রতি, এই অঞ্চলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও সংস্কৃতি নিয়ে একটি ভ্রমণের অভিজ্ঞতা জানা গেল।
এই উপদ্বীপটি যেন প্রকৃতির এক লুকানো রত্ন। এখানকার প্রধান আকর্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে সবুজে ঘেরা ওয়াসাবি ক্ষেত, যা এই অঞ্চলের একটি বিশেষত্ব। এছাড়াও রয়েছে কাওয়াজু সেভেন জলপ্রপাত, যা পাহাড়ের গা বেয়ে নেমে আসা জলের অবিরাম ধারার এক অপূর্ব দৃশ্য তৈরি করে।
আর সমুদ্রের কাছাকাছি হওয়ায় এখানকার উপকূলীয় দৃশ্যও অসাধারণ। এখানকার সমুদ্র সৈকতে দাঁড়িয়ে উপভোগ করা যায় ঢেউয়ের গর্জন, যা প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য এক অসাধারণ অনুভূতি।
ভ্রমণের অন্যতম আকর্ষণ ছিল এখানকার স্থানীয় খাবার। ইজু উপদ্বীপের রেস্তোরাঁগুলোতে ‘কাইসেকি’ নামক বিশেষ ধরনের খাবার পরিবেশন করা হয়। এই খাবারে স্থানীয় উপকরণ দিয়ে তৈরি বিভিন্ন পদের সমাহার থাকে, যা খাদ্যরসিকদের মন জয় করে।
সি-ব্রীম মাছ, লবস্টার, স্কুইড ও কাঁকড়ার মতো তাজা সামুদ্রিক খাবার এখানে খুবই জনপ্রিয়। খাবারের মেনুতে প্রায়শই ওয়াসাবি দেখা যায়, যা জাপানি রন্ধনশৈলীর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
পর্যটকদের জন্য ছিল ওয়াসাবি হট পট ডিনার, যেখানে আমাগি মুরগির মাংসের স্যুপ এবং স্থানীয় সবজি পরিবেশন করা হয়। এছাড়াও ছিল তাজা গ্রিল করা বাঁশের কচি, আমাগি ওয়াসাবি দিয়ে তৈরি সাশিমী, স্টিমড স্ক্যালপ ডাম্পলিং, এবং চেরি ব্লসম র্যাডিউশ সহ বিভিন্ন মুখরোচক পদ।
ঐতিহ্যপূর্ণ ‘কানেসা’ নামক একটি শুকনো মাছ তৈরির কারখানা এখানকার সংস্কৃতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। ১৮৮২ সালে প্রতিষ্ঠিত এই কারখানায় আজও পুরনো পদ্ধতিতে ‘কাটসুবুশি’ নামের শুকনো মাছ তৈরি করা হয়।
পর্যটকদের জন্য এখানে কর্মশালাও অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে মাছ তৈরির পদ্ধতি সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয়।
ইজু উপদ্বীপের অভিজ্ঞতা শুধু প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। এখানকার ঐতিহ্যবাহী ‘ওনসেন’ বা গরম জলের ঝর্ণাগুলোতে স্নান করাও ছিল একটি বিশেষ আকর্ষণ।
পাহাড়ের উপরে অবস্থিত এই ঝর্ণাগুলোতে স্নান করার সময় বাইরের প্রকৃতির মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখা যায়।
এই ভ্রমণের সবচেয়ে সুন্দর মুহূর্তগুলোর মধ্যে একটি ছিল ফুজি পর্বতের দেখা পাওয়া। মেঘমুক্ত আকাশে যখন ফুজি পর্বতের চূড়া দেখা যায়, তখন তা যেন এক স্বর্গীয় দৃশ্য তৈরি করে।
ভ্রমণের গাইড তাদের ধৈর্য ধরতে বলেছিলেন, কারণ মেঘ কেটে যাওয়ার পর এই চূড়া দেখা যেতে পারে।
সবুজ পাহাড়, স্বচ্ছ জলের ধারা, আর স্থানীয় সংস্কৃতির এক দারুণ মিশ্রণ হলো ইজু উপদ্বীপ। যারা প্রকৃতির কাছাকাছি থাকতে ভালোবাসেন এবং নতুন কিছু অভিজ্ঞতা অর্জন করতে চান, তাদের জন্য এই স্থানটি একটি আদর্শ গন্তব্য হতে পারে।
তথ্য সূত্র: ট্রাভেল এন্ড লেজার