সংবাদ শিরোনাম: তিউনিসিয়ায় ‘ষড়যন্ত্রের’ বিচার: মৃত্যুদণ্ডের অতীত ও বর্তমান
তিউনিসিয়ায় ৪০ জনের বেশি ব্যক্তির বিরুদ্ধে দেশটির সরকার ও প্রেসিডেন্ট কাইস সায়েদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগের বিচার পুনরায় শুরু হতে যাচ্ছে। অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন বিরোধী রাজনৈতিক দলের শীর্ষস্থানীয় নেতা, কূটনীতিক এবং সাংবাদিক।
তাঁদের বিরুদ্ধে প্রেসিডেন্ট কাইস সায়েদের ক্ষমতা দুর্বল করতে বিদেশি শক্তির সঙ্গে যোগসাজশের মতো গুরুতর অভিযোগ আনা হয়েছে।
এই মামলার শুনানি প্রথমে গত ৪ঠা মার্চে হওয়ার কথা ছিল, যা পরে ১১ই এপ্রিল পর্যন্ত স্থগিত করা হয় এবং পরে আরও এক সপ্তাহ পিছিয়ে দেওয়া হয়। অভিযুক্তদের অনেকেই দীর্ঘ কারাদণ্ড অথবা মৃত্যুদণ্ডের ঝুঁকিতে রয়েছেন।
তিউনিসিয়ায় যদিও ১৯৯১ সাল থেকে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়নি, তবে আদালত এখনও এই সাজা দিতে পারে। প্রশ্ন হলো, এই মামলায় অভিযুক্তদের কাউকে কি মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে? আর সেই রায় কি কার্যকর করা হবে?
আসুন, বিষয়টা একটু বিস্তারিতভাবে দেখা যাক। যদিও ১৯৯১ সাল থেকে তিউনিসিয়ায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়নি, তবে দেশটির আইনে মৃত্যুদণ্ডের বিধান এখনো বহাল আছে।
২০১৪ সালের সংবিধানেও মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সুযোগ রয়েছে। তবে ২০১২ সাল থেকে তিউনিসিয়া জাতিসংঘের মৃত্যুদণ্ড স্থগিতের বৈশ্বিক প্রচেষ্টাকে সমর্থন করে আসছে।
সর্বশেষ, ১৯৯১ সালে ‘নাবুলের কসাই’ নামে পরিচিত সিরিয়াল কিলার নাসের দামার্গিকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল।
কিন্তু মৃত্যুদণ্ডের বিধান দেশটির আইন ও আদালতের রায়ে এখনো বিদ্যমান। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ২০১৩ সালে বিরোধীদলীয় নেতা মোহামেদ ব্রাহ্মীর হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার দায়ে আটজনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া, মার্চ মাসে একই বছরে নিহত অপর এক রাজনৈতিক কর্মী শোকরি বেলায়েদের হত্যার দায়ে আরও চারজনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
২০১৬ সালে বেন গুরদানে শহরে ইসলামিক স্টেটের (আইএসআইএস) সদস্যদের হামলায় নিহত হন ৭ জন বেসামরিক নাগরিক এবং ১৩ জন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য।
এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ২০২২ সালে ১৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। একই রকমভাবে, ২০১৫ সালে তিউনিসের একটি রাষ্ট্রপতি গার্ডের বাসে আত্মঘাতী বোমা হামলায় ১২ জন গার্ড নিহত এবং ২০ জন আহত হওয়ার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে আটজনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।
অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন জাউহার বেন এমবারেক, খায়েম তুর্কি, ইসাম চেবি, গাজি চাওয়াসি, রিধা বেলহাজ এবং আবদেলহামিদ জেলাসি। তাঁদের ফেব্রুয়ারি ২০২৩ সাল থেকে আটক রাখা হয়েছে।
তাঁদের বিরুদ্ধে পেনাল কোডের ৭২ অনুচ্ছেদ অনুসারে রাষ্ট্রীয় চরিত্র পরিবর্তনের চেষ্টার অভিযোগ আনা হয়েছে। দোষী সাব্যস্ত হলে তাঁদেরও মৃত্যুদণ্ড হতে পারে।
আরেক অভিযুক্ত, সাবেক বিচারমন্ত্রী নুরুদ্দিন ভিরি। তাঁর বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিছু পোস্টের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় চরিত্র পরিবর্তনের চেষ্টা করার অভিযোগ আনা হয়েছে।
এছাড়া, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত করা এবং ‘সন্ত্রাসী’ গোষ্ঠীর সঙ্গে জড়িত থাকার মতো অভিযোগও রয়েছে, যা মৃত্যুদণ্ডযোগ্য অপরাধ।
২০১৯ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারের সময় কাইস সাঈদ মৃত্যুদণ্ডের প্রতি তাঁর সমর্থনের কথা জানান। তিনি বলেছিলেন, যথাযথ বিচার প্রক্রিয়া অনুসরণ করে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা যেতে পারে।
২০২০ সালে ২৯ বছর বয়সী রাহমা লাহমারকে নৃশংসভাবে হত্যার পর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ার জবাবে সাঈদ তাঁর নিরাপত্তা পরিষদের কাছে বলেন, “খুনের শাস্তি মৃত্যুদণ্ডই হওয়া উচিত।”
তবে, সাঈদ প্রকাশ্যে মৃত্যুদণ্ডের পক্ষে মত দিলেও, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ এবং সমালোচকদের বিরুদ্ধে ব্যাপক ধরপাকড় চালানো সত্ত্বেও, তাঁর শাসনকালে এখনো পর্যন্ত কোনো মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়নি।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা