চীনের বাজারে শুল্ক আরোপের কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সৌর বিদ্যুতের খরচ বাড়ছে, এমনটাই জানা যাচ্ছে। দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু করার পর থেকে সৌর প্যানেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় অনেক পরিবার এবং ব্যবসার জন্য সৌর শক্তি ব্যবহার করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে সৌর প্যানেলের গুরুত্বপূর্ণ উপাদানগুলোর প্রায় ৮০ শতাংশ আসে চীন থেকে। আন্তর্জাতিক শক্তি সংস্থা বা ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সির তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সাল পর্যন্ত সৌর প্যানেলের কাঁচামাল, যেমন পলিসিলিকন, কাঁচ এবং সৌর কোষের উৎপাদনে চীনের একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল।
এই কারণে, চীনের উপর শুল্ক বৃদ্ধি পেলে স্বাভাবিকভাবেই সৌর বিদ্যুতের দাম বাড়ে।
ওহাইও রাজ্যের বাসিন্দা মাইক সামারস তার বাড়ির ছাদে সৌর প্যানেল লাগানোর জন্য প্রস্তুত ছিলেন। তিনি জানান, সৌর প্যানেল স্থাপনে তার প্রায় ৩৯,০০০ মার্কিন ডলার খরচ হয়েছে এবং এর জন্য তিনি ১০,০০০ মার্কিন ডলারের কর ছাড় পাবেন।
তবে, এখনকার পরিস্থিতিতে সৌর প্যানেলের দাম বাড়ায় অনেকেই এমন সুবিধা থেকে বঞ্চিত হতে পারেন।
যুক্তরাষ্ট্র সরকার অবশ্য অভ্যন্তরীণ সৌর প্যানেল উৎপাদন বাড়াতে আগ্রহী। এই লক্ষ্যে, সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আমলে প্রণীত ‘ইনফ্লেশন রিডাকশন অ্যাক্ট’-এর মাধ্যমে সৌর শক্তি খাতে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করা হয়েছে।
কিন্তু চীনের উৎপাদন ক্ষমতার সঙ্গে প্রতিযোগিতায় এটি এখনো পিছিয়ে আছে।
সৌর প্যানেলের দাম বাড়লে এর সরাসরি প্রভাব পড়বে গ্রাহকদের উপর। সৌর প্যানেল প্রস্তুতকারক এবং সরবরাহকারীরাও পড়েছেন উভয় সংকটে।
ক্লিভল্যান্ড ভিত্তিক সোলার প্যানেল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ইয়েলোলাইটের সহকারী বিক্রয় ব্যবস্থাপক ব্রায়ান ডি’পাওলো জানান, শুল্কের কারণে তাদের পণ্যের দাম বাড়ছে এবং অনেক গ্রাহক পরিস্থিতি পরিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করছেন।
সৌর বিদ্যুতের দাম বাড়ার কারণ হিসেবে সরবরাহ ও চাহিদার বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। সৌর প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত হেলিনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মার্টিন পোখতারুক জানান, শুল্ক বাড়ার কারণে চীনের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাঁচামালের দাম ফেব্রুয়ারিতে বেড়ে গিয়েছিল।
অন্যান্য দেশের সরবরাহকারীরাও সেই দামের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দাম বাড়িয়েছে, ফলে সব উৎস থেকেই খরচ বাড়ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আবাসিক সৌর বিদ্যুৎ আরও ব্যয়বহুল হবে। কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির জলবায়ু স্কুলের ডিন অ্যালেক্সিস অ্যাব্রামসন মনে করেন, এর ফলে সৌর বিদ্যুতের ব্যবহার কমতে পারে এবং ছোট ও মাঝারি আকারের সৌর বিদ্যুৎ সরবরাহকারীরা ক্ষতির শিকার হতে পারে।
তবে, যুক্তরাষ্ট্রের সোলার এনার্জি ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অ্যাবিগেইল রস হপার বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র দ্রুতই চীনের কাছ থেকে সরবরাহ শৃঙ্খলের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেতে চাইছে, যাতে সৌর বিদ্যুতের শক্তিশালী উৎপাদন ভিত্তি তৈরি করা যায়।
তিনি আরও জানান, ২০২৪ সালে মডিউল তৈরির ক্ষমতা ১৯০% বেড়েছে।
সৌর বিদ্যুৎ হলো একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিচ্ছন্ন শক্তি। কারণ এটি কয়লা, প্রাকৃতিক গ্যাস এবং তেলের মতো ক্ষতিকারক গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ করে না, যা পৃথিবীর উষ্ণায়নের প্রধান কারণ।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস