যুক্তরাষ্ট্রের মেইন অঙ্গরাজ্যের একটি নিভৃত পল্লীতে, সাদামাটা একটি চার্চ ভবনের অভ্যন্তরে লুকিয়ে আছে শিল্পের এক অসাধারণ ভাণ্ডার। দক্ষিণ সোলোন মিটিং হাউস নামের এই ভবনের ভেতরে রয়েছে ৭০ বছর পুরনো ফ্রেস্কো চিত্রকর্ম।
সম্প্রতি কলবি কলেজের শিক্ষার্থীদের তৈরি করা একটি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে এই শিল্পকর্মগুলো নতুন করে পরিচিতি লাভ করেছে এবং স্থানীয় শিল্পী ও শিল্পপ্রেমীদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে।
মূলত, এই মিটিং হাউসটি ১৮৪২ সালে নির্মিত হয়েছিল। একসময় এটি চার্চ হিসেবে ব্যবহৃত হলেও, পরবর্তীতে এর ব্যবহার কমে যায়।
১৯৫০-এর দশকে স্থানীয় শিল্পী মার্গারেট ডে ব্লেকের উদ্যোগে, স্কোয়েগান স্কুল অফ পেইন্টিং অ্যান্ড স্কাল্পচারের তত্ত্বাবধানে কয়েকজন তরুণ শিল্পী এখানে ফ্রেস্কো চিত্রকর্ম আঁকেন।
এই শিল্পকর্মগুলোর বিষয়বস্তু নির্বাচনে শিল্পীদের স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছিল, তবে বাইবেলের বিভিন্ন দৃশ্যকে প্রাধান্য দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। ১৯৫২ থেকে ১৯৫৬ সালের মধ্যে শিল্পীরা পুরো ভবনের অভ্যন্তরীণ দেয়ালে এই চিত্রকর্মগুলো ফুটিয়ে তোলেন।
এর মধ্যে লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির ‘দ্য লাস্ট সাপার’-এর একটি চিত্রও রয়েছে। এছাড়াও, আব্রাহামের পুত্রকে উৎসর্গ করার দৃশ্য এবং মাইকেল অ্যাঞ্জেলোর সিস্টিন চ্যাপেলের আদলে মহাপ্লাবনের ছবিও এখানে অঙ্কিত হয়েছে।
বর্তমানে এই মিটিং হাউসটি স্থানীয় জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত। এখানে বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
পুরনো দিনের অনেক বৈশিষ্ট্য এখনো অক্ষুণ্ণ রয়েছে, যা এটিকে একটি বিশেষ স্থান করে তুলেছে। এই চিত্রকর্মগুলি শুধু স্থানীয়দের কাছেই নয়, বাইরের অনেক শিল্পীর কাছেও অত্যন্ত মূল্যবান।
এই প্রসঙ্গে, কলবি কলেজের আর্ট প্রফেসর ভেরোনিক প্লেশ বলেন, “আমি জায়গাটা ভালোবাসতে শুরু করেছি, কারণ আমি সারা জীবন ফ্রেস্কো নিয়ে পড়াশোনা করেছি।” তিনি আরও মনে করেন, এই ধরনের শিল্পকর্ম জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত স্থানে থাকা উচিত, কোনো ব্যক্তিগত সংগ্রহশালায় নয়।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায়, মেইনের এই মিটিং হাউসটিকে অনেকেই ‘মেইনের সিস্টিন চ্যাপেল’ হিসেবে অভিহিত করেন। কারণ, এখানকার দেয়ালচিত্রগুলির বিশালতা এবং শৈল্পিক গুণমান সত্যিই অসাধারণ।
বর্তমানে, কলবি কলেজের শিক্ষার্থীরা একটি ওয়েবসাইট তৈরি করার ফলে এই শিল্পকর্মগুলো সম্পর্কে নতুন প্রজন্মের মধ্যে আগ্রহ বাড়ছে। স্থানীয় এক হাই স্কুলের শিক্ষক সুজান গউলেট জানান, তিনি আগে থেকেই এই ফ্রেস্কোগুলো সম্পর্কে জানতেন এবং প্রায়ই ভবনের জানালা দিয়ে উঁকি দিতেন।
তিনি বলেন, “এই চিত্রকর্মগুলো আজও শিল্পপ্রেমীদের অনুপ্রাণিত করে, যা খুবই আনন্দের।”
এই ঐতিহাসিক ও শৈল্পিক নিদর্শন, আমাদের সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এর সংরক্ষণ এবং প্রচার করা অত্যন্ত জরুরি।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস