ভূমিকম্পের রহস্য! বিজ্ঞানীরা খুঁজে পেলেন, ফাটছে সিয়েরা নেভাডা!

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিয়েরা নেভাদার গভীরে, বিজ্ঞানীরা এক অত্যাশ্চর্য আবিষ্কার করেছেন – পৃথিবীর ভূত্বকের গভীরে চলছে এক বিরল প্রক্রিয়া। এই অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিশাল পার্বত্য অঞ্চলের নিচে, ভূত্বকের একটি অংশ ধীরে ধীরে গভীরের দিকে চলে যাচ্ছে, যেন খসে পড়ছে।

বিজ্ঞানীরা এই প্রক্রিয়াটির নাম দিয়েছেন ‘লিথোস্ফেরিক ফাউন্ডারিং’। ক্যালিফোর্নিয়ার সিয়েরা নেভাদা পর্বতমালায় গত কয়েক দশক ধরে হওয়া ভূমিকম্পের তথ্য বিশ্লেষণ করছিলেন ভূমিকম্পবিদ ডেবোরা কিলব।

তিনি গভীর ভূমিকম্পগুলোর দিকে বিশেষভাবে নজর দেন। সাধারণত, এই অঞ্চলে ভূমিকম্পগুলো ভূপৃষ্ঠ থেকে ১০ থেকে ১৮ কিলোমিটার গভীরতায় হয়ে থাকে। কিন্তু কিলব এমন কিছু ভূমিকম্প খুঁজে পান যেগুলো প্রায় ৪০ কিলোমিটার গভীর পর্যন্ত হচ্ছিল। এই গভীরতার বিষয়টি ছিল খুবই অস্বাভাবিক।

কিলবের এই পর্যবেক্ষণ, কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ববিদ ভেরা সুলতে-পেলকামের নজরে আসে। সুলতে-পেলকাম আগে থেকেই সিয়েরা নেভাদার পাথরের গঠন নিয়ে গবেষণা করছিলেন। তার গবেষণায় দেখা যায়, এই অঞ্চলের পাথরের মধ্যে গভীর পরিবর্তন হচ্ছে।

বিজ্ঞানীরা ‘রিসিভার ফাংশন অ্যানালাইসিস’ নামক একটি বিশেষ পদ্ধতি ব্যবহার করে সিয়েরা নেভাদার অভ্যন্তরের গঠন চিত্রিত করেন। এই পদ্ধতিতে ভূমিকম্প তরঙ্গ ব্যবহার করে পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ কাঠামো পর্যবেক্ষণ করা হয়। তাদের অনুসন্ধানে ধরা পড়ে, পর্বতমালার কেন্দ্রস্থলে পৃথিবীর ভূত্বক ধীরে ধীরে নিচ দিকে সরে যাচ্ছে।

সুলতে-পেলকাম এবং কিলব তাদের এই গবেষণা ‘জিওফিজিক্যাল রিসার্চ লেটার্স’ জার্নালে প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, লিথোস্ফেরিক ফাউন্ডারিং নামের এই প্রক্রিয়াটি এখনো চলছে। বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, এই প্রক্রিয়া সম্ভবত উত্তর দিকেও বিস্তৃত হচ্ছে।

এই আবিষ্কারের ফলে বিজ্ঞানীরা মহাদেশগুলোর সৃষ্টিরহস্য সম্পর্কে নতুন ধারণা পেতে পারেন। কারণ, এই ধরনের প্রক্রিয়া সম্ভবত আগে অনেকবার পৃথিবীর বুকে ঘটেছে, যার ফলস্বরূপ আজকের মহাদেশগুলোর সৃষ্টি হয়েছে। লিথোস্ফেরিক ফাউন্ডারিং হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে ভূত্বকের ঘন উপাদানগুলো গভীরের দিকে চলে যায়, আর হালকা উপাদানগুলো উপরে উঠে আসে।

গবেষকরা দেখেছেন, সিয়েরা নেভাদার নিচে প্রায় ৪০ থেকে ৭০ কিলোমিটার গভীরে একটি বিশেষ স্তর রয়েছে, যেখানে পাথরের বিন্যাসে পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। দক্ষিণের সিয়েরায় ঘন শিলাগুলো ইতোমধ্যে ভূত্বক থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। কিন্তু কেন্দ্রের অঞ্চলে এই প্রক্রিয়া এখনো চলমান।

আর উত্তরের সিয়েরাতে পরিবর্তনের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। এই আবিষ্কারের ফলে ভূমিকম্প সম্পর্কেও নতুন তথ্য জানা যেতে পারে। কারণ, বিজ্ঞানীরা মনে করেন, এই গভীরের পরিবর্তনগুলোর কারণেই ওই অঞ্চলে গভীর ভূমিকম্প হচ্ছে।

ভেরা সুলতে-পেলকাম বলেছেন, “আমরা যদি পৃথিবীর এই গভীরের প্রক্রিয়াগুলো বুঝতে পারি, তাহলে ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলো সম্পর্কে আরও ভালোভাবে জানতে পারব।” এই গবেষণার সঙ্গে জড়িত নন, এমন একজন বিশেষজ্ঞ, জর্জিয়া টেক-এর গবেষক মিচেল ম্যাকমিলান বলেছেন, “এই গবেষণাটি বিভিন্ন তথ্যকে একত্রিত করে একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে।”

সিয়েরা নেভাদার নিচে চলমান এই প্রক্রিয়া ভবিষ্যতে সেখানকার ভূ-প্রাকৃতিক পরিবর্তনে প্রভাব ফেলতে পারে। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, এই ধরনের গবেষণা পৃথিবীর গঠন এবং বিবর্তন সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান আরও বাড়াতে সাহায্য করবে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *