ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে গাঁজা? বৃহত্তম গবেষণায় চাঞ্চল্যকর তথ্য!

ক্যানসার চিকিৎসায় চিকিৎসা ক্ষেত্রে গাঁজার সম্ভাবনা নিয়ে সম্প্রতি আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন একটি গবেষণা প্রকাশ হয়েছে। ফ্রন্টিয়ার্স ইন অনকোলজি জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণায় ক্যানসার চিকিৎসায় গাঁজার কার্যকারিতা নিয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

গবেষণাটি বলছে, গাঁজা ক্যানসারের উপসর্গ কমাতে এবং সম্ভবত রোগটির বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়ক হতে পারে। গবেষণার প্রধান, হোল হেলথ অনকোলজি ইনস্টিটিউটের গবেষণা পরিচালক রায়ান ক্যাসেল (Ryan Castle) জানিয়েছেন, তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল ক্যানসার চিকিৎসায় গাঁজার সম্ভাবনা সম্পর্কে একটি বৈজ্ঞানিক ঐকমত্য তৈরি করা।

ক্যাসেল আরও উল্লেখ করেন, গাঁজা এখনো যুক্তরাষ্ট্রে ফেডারেলভাবে অবৈধ হওয়ায়, এই বিষয়ে গবেষণা করা কঠিন ছিল। তাই, তারা ব্যাপক পরিসরে আগের বিভিন্ন গবেষণা পর্যালোচনা করেছেন।

গবেষণায় ১০,০০০ এর বেশি গবেষণা বিশ্লেষণ করা হয়েছে। ক্যাসেলের দল এই বিশাল ডেটা সেট বিশ্লেষণ করতে এআই (AI) প্রযুক্তি ব্যবহার করেছে, বিশেষ করে “সেন্টিমেন্ট অ্যানালাইসিস” নামক একটি পদ্ধতি।

এর মাধ্যমে গবেষকরা দেখতে পান, কতগুলি গবেষণায় ক্যানসার চিকিৎসায় গাঁজার ইতিবাচক, নিরপেক্ষ বা নেতিবাচক প্রভাবের কথা বলা হয়েছে। যেমন, ক্ষুধা বৃদ্ধি, প্রদাহ হ্রাস বা ক্যানসার কোষের মৃত্যু (apoptosis) ত্বরান্বিত করার মতো বিষয়গুলো বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

গবেষণায় দেখা গেছে, গাঁজা ক্যানসারের সঙ্গে সম্পর্কিত প্রদাহ, ক্ষুধা হ্রাস এবং বমি বমি ভাব কমাতে সহায়ক হতে পারে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, এটি ক্যানসার কোষের বিরুদ্ধে লড়াই করতেও সাহায্য করতে পারে।

গবেষণায় অংশগ্রহণকারী বিজ্ঞানীরা এই বিষয়ে প্রায় ৭৫ শতাংশ ঐকমত্যে পৌঁছেছেন। অন্যদিকে, ক্যানসার চিকিৎসায় গাঁজার ব্যবহার নিয়ে কিছু বিতর্কও রয়েছে।

একটি মেটা-বিশ্লেষণে দেখা গেছে, যারা গাঁজা সেবনে আসক্ত, তাদের মধ্যে মাথা ও ঘাড়ের ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তবে, ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন খ্যাতি সম্পন্ন ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ডোনাল্ড আব্রামস (Donald Abrams) এই যুক্তির সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করেন।

তিনি মনে করেন, এই গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে তামাক ও অ্যালকোহলের ব্যবহার একটি প্রধান কারণ হতে পারে। ড. আব্রামস ক্যানসার রোগীদের ক্ষুধা, বমি বমি ভাব, ব্যথা এবং উদ্বেগের মতো উপসর্গ কমাতে গাঁজার উপকারিতা খুঁজে পেয়েছেন।

তবে, তিনি গাঁজা ক্যানসার নিরাময় করতে পারে এমন ধারণার সঙ্গে একমত নন। তিনি বলেন, “আমি বিগত ৪২ বছর ধরে সান ফ্রান্সিসকোতে ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করছি। আমার অনেক রোগী গাঁজা ব্যবহার করেছেন, কিন্তু আমি গাঁজাকে ক্যানসার নিরাময় করতে দেখিনি।”

গবেষকরা আরও উল্লেখ করেছেন, প্রি-ক্লিনিক্যাল প্রমাণ এবং রোগীদের ফলাফলের ভিত্তিতে দেখা যায়, গাঁজা ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াই করার সম্ভাবনা রাখে। কিছু ছোট আকারের গবেষণায় দেখা গেছে, যারা কেমোথেরাপির পাশাপাশি গাঁজা-ভিত্তিক ওষুধ ব্যবহার করেছেন, তারা বেশি দিন বেঁচে ছিলেন।

তবে, গাঁজার কার্যকারিতা প্রমাণ করতে এবং সর্বোত্তম চিকিৎসার জন্য আরও বড় আকারের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল (clinical trials) প্রয়োজন। গবেষকরা আশা করছেন, তাদের এই গবেষণা মার্কিন ড্রাগ এনফোর্সমেন্ট অ্যাডমিনিস্ট্রেশনকে (US Drug Enforcement Administration) গাঁজা পুনরায় শ্রেণীভুক্ত করতে উৎসাহিত করবে, যা ক্লিনিক্যাল গবেষণার উপর থেকে বিধিনিষেধ কমাতে সাহায্য করবে।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *