তুরস্কে শুরু গণ-বিচার: মেয়র ইমামোগ্লুর গ্রেফতারের জেরে ফুঁসছে দেশ

তুরস্কে মেয়রের কারাদণ্ডের প্রতিবাদে বিক্ষোভের জের, গণহারে বিচার শুরু। সম্প্রতি তুরস্কের ইস্তাম্বুলে মেয়র একরাম ইমামোগ্লুর কারাদণ্ডের প্রতিবাদে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভের জেরে গণহারে বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

শুক্রবার দেশটির আদালতগুলোতে এই বিচার কার্যক্রম শুরু হয়, যেখানে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের শুনানি চলছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, মেয়র ইমামোগ্লুর বিরুদ্ধে আনা দুর্নীতির অভিযোগ আসলে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দুর্বল করার একটি কৌশল।

ধারণা করা হচ্ছে, ২০২৮ সালের নির্বাচনে এরদোয়ান পুনরায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন, আর সে কারণেই ইমামোগ্লুকে আগে থেকেই চাপে রাখা হচ্ছে।

বিক্ষোভের সময় গ্রেপ্তার হওয়া ১৪০০ জনেরও বেশি মানুষের মধ্যে কয়েকজনকে বিচারের মুখোমুখি করা হচ্ছে।

মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) এই বিচার প্রক্রিয়াকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে নিন্দা করেছে।

তাদের মতে, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পর্যাপ্ত প্রমাণ নেই এবং বিচারের ধরন গণতান্ত্রিক রীতিনীতির পরিপন্থী।

ইস্তাম্বুলের আদালতগুলোতে বিচার শুরুর আগে, কিছু বিক্ষোভকারীর অভিভাবক ও সমর্থক আদালতের বাইরে সমবেত হয়ে বিক্ষোভ করেন।

তারা তাদের সন্তানদের মুক্তির দাবিতে বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন এবং বেলুন উড়িয়ে প্রতিবাদ জানান।

তাদের মূল দাবি ছিল, গ্রেপ্তারকৃত শিক্ষার্থীদের মুক্তি ও তাদের স্বাভাবিক জীবন ফিরিয়ে দেওয়া।

এই বিচার প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত আছেন এমন আটজন সাংবাদিককেও আদালতে হাজির করা হয়।

আইনজীবীরা দ্রুত এই মামলা খারিজের আবেদন করেছেন, কারণ তাদের মতে, সাংবাদিকরা তাদের সাংবিধানিক অধিকার অনুযায়ীই পেশাগত দায়িত্ব পালন করছিলেন।

এইচআরডব্লিউ ৬৫০ জন বিক্ষোভকারীর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ পর্যালোচনা করে দেখেছে।

তাদের মধ্যে ১২০ জনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ নিষিদ্ধ হওয়ার পরও সমাবেশে অংশ নেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে।

অভিযুক্তদের সম্ভাব্য সাজা হিসেবে ছয় মাস থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে।

তবে, অনেক ক্ষেত্রে অভিযোগের সপক্ষে দুর্বল প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়েছে।

উদাহরণস্বরূপ, একজন বিক্ষোভকারীর হাতে একটি পাথর থাকার অভিযোগকে অস্ত্র হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।

আঙ্কারার বিক্ষোভকারীদের জলকামান ব্যবহার করে ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ।

ইস্তাম্বুলে বিক্ষোভকারীদের ওপর পিপার স্প্রে করা হয় এবং বেশ কয়েকজন বিক্ষোভকারীকে মারধর করা হয়।

মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মতে, তুরস্কের এই পদক্ষেপ শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ ও মত প্রকাশের অধিকারের পরিপন্থী।

ইউরোপীয় মানবাধিকার আদালত (ইসিএইচআর) ইতোমধ্যেই তুরস্কের সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ দমনের অভিযোগে ৭০টির বেশি রায় দিয়েছে।

ইউরোপীয় কাউন্সিল তুরস্ককে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের অধিকার রক্ষার আহ্বান জানিয়েছে।

তাদের মতে, অভিযুক্তদের নির্দোষ প্রমাণের সুযোগ দেওয়া, বিচারের আগে আটকাদেশের কঠোর ব্যবহার এবং রাজনৈতিক মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে।

তবে, এরপরেও এরদোয়ানের সরকার নিয়ন্ত্রণ কঠোর করেছে।

একটি মার্কিন গবেষণা সংস্থা ফ্রিডম হাউস তুরস্ককে ‘অমুক্ত’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে, কারণ সেখানে সেন্সরশিপ ও নজরদারির বিস্তার ঘটেছে।

পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, বিচার প্রক্রিয়া শুরুর মাধ্যমে তুরস্কে কর্তৃত্ববাদের বিস্তার ঘটছে।

কারণ দেশটির প্রায় ৯০ শতাংশ গণমাধ্যম সরকারের নিয়ন্ত্রণে, এবং সাংবাদিকদের প্রায়ই লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা হচ্ছে।

এই পরিস্থিতিতে, ২০০৩ সাল থেকে ক্ষমতায় থাকা এরদোয়ানের শাসনের অধীনে অধিকার খর্ব হওয়ার বিষয়টি আরও স্পষ্ট হচ্ছে।

এরদোয়ান ২০২৯ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকতে পারেন।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *