গাজায় শিশুদের খাদ্য সংকট: দিনে একবেলার কম খাচ্ছে?

গাজায় শিশুদের জন্য খাদ্য সংকট তীব্র, সাহায্য সংস্থাগুলোর হুঁশিয়ারি। গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি অবরোধ এবং সামরিক অভিযানের কারণে সেখানকার শিশুরা প্রতিদিন এক বেলা খাবারও ঠিকমতো পাচ্ছে না।

১২টি প্রধান আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থার প্রধানদের যৌথ বিবৃতিতে এই গুরুতর উদ্বেগের কথা জানানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ওই বিবৃতিতে বলা হয়, গত ১৮ মাস ধরে চলা ইসরায়েলের সামরিক কার্যক্রম এবং গত মাসের অবরোধের কারণে গাজায় মানবিক সহায়তা ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে।

সংস্থাগুলোর হিসাব অনুযায়ী, প্রায় ৯৫ শতাংশ আন্তর্জাতিক ও ফিলিস্তিনি সাহায্য সংস্থা ইতোমধ্যে গাজায় তাদের কার্যক্রম হয় স্থগিত করেছে, নয়তো কমিয়ে দিয়েছে। কারণ হিসেবে তারা উল্লেখ করেছে নির্বিচার বোমা হামলা এবং এর ফলে চলাচলের চরম ঝুঁকির কথা।

সাহায্য সংস্থা অক্সফামের নীতি বিষয়ক প্রধান বুশরা খলিল বলেন, “শিশুরা দিনে এক বেলাও খাবার পাচ্ছে না এবং তাদের পরবর্তী খাবার জোগাড় করতে রীতিমতো সংগ্রাম করতে হচ্ছে। সবাই এখন শুধু ক্যানবন্দী খাবার খাচ্ছে। গাজায় অপুষ্টি এবং দুর্ভিক্ষের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।”

ডক্টরস উইদাউট বর্ডার্সের গাজায় জরুরি সমন্বয়কারী আমান্দে বাজরোলি জানান, সাহায্যকর্মীরা অসহায়ভাবে নারী ও শিশুদের কষ্ট পেতে এবং মারা যেতে দেখছেন। অথচ তাদের কাছে পর্যাপ্ত ত্রাণ সামগ্রীও নেই। তিনি আরও বলেন, “এটা কোনো মানবিক ব্যর্থতা নয়, বরং একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। ইচ্ছাকৃতভাবে একটি জাতির টিকে থাকার ক্ষমতাকে ধ্বংস করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে।”

আল জাজিরার প্রতিনিধি হানি মাহমুদ শুক্রবার গাজা শহর থেকে জানান, সেখানে শিশুদের জন্য প্রয়োজনীয় বেবি ফর্মুলারও অভাব দেখা দিয়েছে। এর ফলে শিশু এবং শিশুদের মধ্যে অপুষ্টি বাড়ছে। তিনি বলেন, “আমরা মারাত্মক অপুষ্টির অনেক ঘটনা দেখেছি। পরিবারগুলো তাদের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় চাহিদা, এমনকি শিশু ও নবজাতকদের খাবার পর্যন্ত জোগাড় করতে পারছে না।

বাজারের ফার্মেসিগুলোতে বেবি ফর্মুলা প্রায় নেই বললেই চলে। গাজায় দ্রুত সব প্রয়োজনীয় জিনিসের সংকট দেখা দিচ্ছে।”

গাজার দেইর আল-বালাহ এলাকার আল-আকসা হাসপাতালের বাইরে ফিলিস্তিনিরা আল জাজিরাকে জানিয়েছেন, অপুষ্টির কারণে তারা তাদের সন্তানদের হারাচ্ছেন। ফাদি আহমেদ নামের এক ব্যক্তি জানান, তার ছেলের ফুসফুসে মারাত্মক সংক্রমণ ধরা পড়েছিল, যার কারণে তার শরীরে অক্সিজেনের অভাব দেখা দেয়।

তিনি বলেন, “ছেলের দুর্বলতা ও মারাত্মক অপুষ্টির কারণে সে রোগের সঙ্গে লড়তে পারেনি এবং হাসপাতালে এক সপ্তাহ চিকিৎসাধীন থাকার পর মারা যায়।”

আরেকজন নারী, ইনতিসার হামদান, জানিয়েছেন, তার নাতিকে বাঁচাতে না পারার কারণ হলো, তার বাবা-মা তিন দিন ধরে দুধ খুঁজে পাননি। আল জাজিরার প্রতিনিধি তারেক আবু আজ্জুমের ভাষ্যমতে, “শিশুরা শুধু অপুষ্টির শিকার হচ্ছে না, বরং তারা এমন গুরুতর অসুস্থতা ও স্বাস্থ্য জটিলতায় ভুগছে, যা সহজে সারানো যায় না এবং এর জন্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সামগ্রীরও অভাব রয়েছে।”

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে অন্তত ৬০ হাজার শিশু অপুষ্টির শিকার। সাহায্য সংস্থাগুলো বলছে, মানবিক সাহায্য কর্মীদের জন্য গাজা বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক স্থান। ফলে শিশুদের কাছে সহায়তা পৌঁছে দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।

২০২৩ সালের অক্টোবর মাস থেকে এ পর্যন্ত ৪ শতাধিক সাহায্য কর্মী এবং ১ হাজার ৩০০ জনের বেশি স্বাস্থ্যকর্মীকে গাজায় হত্যা করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক মানবিক আইন অনুযায়ী, মানবিক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষা দেওয়ার কথা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, সম্প্রতি ১৫ জন ফিলিস্তিনি প্যারামেডিক ও উদ্ধারকর্মীর মরদেহ গণকবরে পাওয়া গেছে। এতে বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড় উঠলেও, অনেক ঘটনা এখনও সামনে আসেনি।

সাহায্য সংস্থাগুলো ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠীর প্রতি তাদের কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে। একই সঙ্গে গাজায় নিরাপদ ও বাধাহীনভাবে ত্রাণ সরবরাহ করার অনুমতি দেওয়ার জন্য এবং বিশ্ব নেতাদের প্রতি আরও অবরোধ আরোপের বিরোধিতা করার আহ্বান জানানো হয়েছে।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *