পনির খেলে বাড়ে বিপদ? ৪৫০ বছরের পুরনো বইয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য!

শিরোনাম: লিডস বিশ্ববিদ্যালয়ে আবিষ্কৃত হলো প্রাচীন ইংরেজি পনির বিষয়ক বই: খাদ্য ও স্বাস্থ্যের ধারণা

প্রাচীন কালের জ্ঞান আজও বিস্মিত করে, বিশেষ করে যখন তা আসে অপ্রত্যাশিত উৎস থেকে। সম্প্রতি, যুক্তরাজ্যের লিডস বিশ্ববিদ্যালয় আবিষ্কার করেছে প্রায় ৪৫০ বছর আগের লেখা একটি বই, যা ইংরেজি ভাষায় লেখা পনির বিষয়ক প্রথম বই হিসেবে পরিচিত।

১৫৮০-এর দশকে লেখা এই “A Pamflyt Compiled of Cheese, Contayninge the Differences, Nature, Qualities, and Goodness, of the Same” নামক পান্ডুলিপিটি খাদ্য এবং স্বাস্থ্য সম্পর্কে সেই সময়ের মানুষের ধারণা তুলে ধরে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, বইটি শুধু কৌতূহলোদ্দীপকই নয়, বরং স্বাস্থ্য এবং খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কে সেই সময়ের মানুষের ধারণা সম্পর্কেও আলোকপাত করে। বইটিতে পনিরের প্রকারভেদ, গুণাগুণ এবং শরীরের উপর এর প্রভাব নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

এমনকি, অতিরিক্ত পনির খেলে কী ধরনের শারীরিক সমস্যা হতে পারে, সে সম্পর্কেও সতর্ক করা হয়েছে। বইটিতে লেখা আছে, “A surfyte of cheese doth bringe payne” অর্থাৎ “অতিরিক্ত পনির সেবনে শরীরে কষ্ট হতে পারে।”

লিডস বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্লি মডার্ন হিস্টরির সহযোগী অধ্যাপক, অ্যালেক্স বামজি বলেন, “বইটি সেই সময়ের মানুষের খাদ্যাভ্যাস এবং স্বাস্থ্য সম্পর্কে গভীর ধারণা দেয়। তখনকার দিনে ‘ডেইরি ইনটলারেন্স’ (dairy intolerance) শব্দ ব্যবহার না হলেও, এমন একটি ধারণা ছিল যে, কিছু মানুষের শরীরে পনির ভালো কাজ করে, আবার কারও ক্ষেত্রে এটি ভিন্ন ফল দেয়।”

বামজি আরও জানান, বইটি সেই সময়ের ‘হিউমার্স’ তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে লেখা হয়েছে। এই তত্ত্ব অনুযায়ী, মানুষের শরীর গরম, ঠান্ডা, শুষ্ক বা আর্দ্র – এই চারটি উপাদানের মিশ্রণে গঠিত এবং খাদ্যের মাধ্যমে এই উপাদানগুলোর ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টা করা হতো।

বইটিতে পাওয়া যায় এমন কিছু চিকিৎসা বিষয়ক পরামর্শ, যা আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। যেমন – গেঁটে বাত (gout) নিরাময়ের জন্য পচা পনির এবং বেকন ফ্যাট ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

তবে, বিশেষজ্ঞরা জোর দিয়ে বলছেন, এই ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি অনুসরণ করা উচিত নয়। স্বাস্থ্য বিষয়ক কোনো সমস্যার সমাধানে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

খাদ্য ইতিহাসবিদ পিটার ব্রিয়ার্স বইটিকে একটি অসাধারণ কাজ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, “আমার মনে হয়, এটি ইংরেজি ভাষায় লেখা কোনো একটি খাদ্য বিষয়ক প্রথম বিস্তারিত একাডেমিক গবেষণা।”

বইটিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, খাবার শেষে পনির খাওয়া উচিত, কারণ এটি খাবারকে পাকস্থলীর নিচে নামাতে সাহায্য করে।

বইটির আবিষ্কার প্রমাণ করে যে, খাদ্য এবং স্বাস্থ্য বিষয়ক ধারণা সময়ের সঙ্গে কীভাবে পরিবর্তিত হয়েছে। লিডস বিশ্ববিদ্যালয়ের এই গবেষণা খাদ্য ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক উন্মোচন করেছে, যা আমাদের খাদ্য, সংস্কৃতি এবং চিকিৎসা বিষয়ক অতীতের ধারণাগুলো আরও ভালোভাবে বুঝতে সাহায্য করবে।

তথ্য সূত্র: The Guardian

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *