পাকিস্তানের পক্ষ থেকে এপ্রিল মাস থেকে ৮০,০০০ এর বেশি আফগান নাগরিককে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। সম্প্রতি দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই তথ্য নিশ্চিত করেছে। ইসলামাবাদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অবৈধভাবে বসবাসকারী বিদেশিদের ফেরত পাঠানোর যে প্রক্রিয়া, তার সময়সীমা আর বাড়ানো হবে না।
পাকিস্তানে বসবাস করা প্রায় ৩০ লক্ষ আফগান নাগরিকের জন্য গত বছর এই পরিকল্পনা শুরু করা হয়েছিল। যাদের বৈধ কাগজপত্র নেই অথবা আফগান সিটিজেন কার্ড নেই, তাদের ৩১শে মার্চের মধ্যে দেশ ছাড়তে বলা হয়েছিল। পরে সময়সীমা এক মাস বাড়ানো হয়, যা ৩০শে এপ্রিল পর্যন্ত ছিল।
জাতিসংঘের অভিবাসন সংস্থা (IOM) জানিয়েছে, এপ্রিল মাস থেকে পাকিস্তান প্রায় ৬০,০০০ আফগান নাগরিককে ফেরত পাঠিয়েছে। সংস্থাটি বলছে, সীমান্ত এবং প্রত্যাবর্তনের অঞ্চলে এই বিপুল সংখ্যক মানুষের পুনর্বাসনে সমস্যা হচ্ছে। আফগানিস্তানে ফেরত যাওয়া মানুষের চাহিদা দ্রুত বাড়ছে।
পাকিস্তানে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর-এর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ১৩ লক্ষাধিক আফগান নাগরিক, যাদের কাছে প্রুফ অফ রেজিস্ট্রেশন কার্ড রয়েছে, তাদের ইসলামাবাদ ও রাওয়ালপিন্ডি শহর ছাড়তে বলা হয়েছে।
পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার শনিবার কাবুলে যাওয়ার কথা রয়েছে। সেখানে তিনি তালেবান সরকারের সঙ্গে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে মিলিত হবেন। এই বৈঠকে নিরাপত্তা, বাণিজ্য, যোগাযোগ এবং দুই দেশের মানুষের মধ্যে সম্পর্ক আরও গভীর করা সহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হবে।
এই ঘটনার ফলে কয়েক দশক ধরে পাকিস্তানে বসবাস করা আফগান পরিবারগুলো তাদের বাসস্থান হারাতে বসেছে। পেশোয়ারের একটি রেস্টুরেন্টের মালিক আকবর খান জানিয়েছেন, তিনি প্রায় ৫০ বছর ধরে এখানে বসবাস করছেন। তার পরিবার এখানেই বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে এবং তাদের পরিবারের ১০ জন সদস্যকে এখানেই কবর দেওয়া হয়েছে। তাই তারা এই জায়গা ছাড়তে চান না।
পাকিস্তান সরকার বলছে, তারা আফগান শরণার্থীদের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান নিরাপত্তা হুমকি এবং অপরাধের যোগসূত্র খুঁজে পেয়েছে। তবে কাবুল এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা এই পদক্ষেপকে ‘জোরপূর্বক নির্বাসন’ এবং ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ হিসেবে বর্ণনা করেছে।
মানবাধিকার সংস্থাগুলোও এই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার সমালোচনা করেছে। তাদের মতে, এই ধরনের গণ-বহিষ্কারের ফলে দুর্বল ও ঝুঁকিপূর্ণ মানুষ, বিশেষ করে নারী ও শিশুরা, দেশে ফিরে নিরাপত্তাহীনতার শিকার হতে পারে।
পাকিস্তানি কর্মকর্তারা বলছেন, যারা বৈধ কাগজপত্র ছাড়া সেখানে বসবাস করছেন, তাদের বিরুদ্ধেই এই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তাদের মতে, এটি জাতীয় নিরাপত্তার একটি অংশ।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা