ট্রাম্পের শুল্ক: বন্ধুত্ব ভাঙছে, বাড়ছে অনিশ্চয়তা!

ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক নীতির কারণে বিশ্ব বাণিজ্য সম্পর্কে নতুন সমীকরণ তৈরি হতে পারে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই নীতির ফলে যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তার আগের অবস্থান হারাতে পারে।

এর ফলস্বরূপ, বিভিন্ন দেশ তাদের মধ্যেকার বাণিজ্য সম্পর্ক আরও জোরদার করতে চাইছে।

ট্রাম্প প্রশাসনের এই শুল্ক নীতি ঘোষণার পর, অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করছেন যে, এর মূল লক্ষ্য ছিল যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদন খাতকে চাঙ্গা করা। কিন্তু এরই মধ্যে বাণিজ্য চুক্তি এবং আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর আস্থা কমেছে।

ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন দের লেয়েন সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘আমরা যেমনটি জানতাম, পশ্চিমা বিশ্ব আর সেই অবস্থানে নেই।’

যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি এখনো বিশ্বের বৃহত্তম, যার মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন (জিডিপি) প্রায় ৩০ ট্রিলিয়ন ডলার। তবে চীনের অর্থনীতিও দ্রুত বাড়ছে, যা প্রায় ১৮ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থনীতি প্রায় ১৯ ট্রিলিয়ন ডলারের। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) মহাপরিচালক এনগোজি ওকঞ্জো-ইওয়েলা জানিয়েছেন, বিশ্ব বাণিজ্যের ১৩ শতাংশ হয় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে, বাকি ৮৭ শতাংশ বাণিজ্য হয় অন্যান্য সদস্য দেশগুলোর মধ্যে।

ট্রাম্প প্রায়ই অভিযোগ করেন যে অন্যান্য দেশগুলো দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রকে ঠকাচ্ছে। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অনেক উন্নত দেশের কাছে ঈর্ষণীয়।

এরই মধ্যে, যুক্তরাষ্ট্র অ্যালুমিনিয়াম ও ইস্পাতের ওপর ২৫ শতাংশ, মেক্সিকো ও কানাডা থেকে আসা পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ, চীনের পণ্য আমদানির ওপর ১৪৫ শতাংশ এবং সব মার্কিন আমদানির ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে।

তবে ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের এই প্রক্রিয়াটি বেশ দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে। কিছু ক্ষেত্রে শুল্ক কমানো হয়েছে, আবার নতুন করে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।

এমন নীতি পরিবর্তনের কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং দেশগুলোর জন্য নতুন পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আন্তর্জাতিক অর্থনীতিবিদদের মতে, এই শুল্ক নীতি বিশ্ব অর্থনীতির গতিকে উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে দেবে। এছাড়াও, নীতিনির্ধারণের ক্ষেত্রে অসামঞ্জস্যপূর্ণ পদক্ষেপ বিশ্বজুড়ে আস্থার সংকট তৈরি করেছে।

ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েলও বলেছেন, এই ধরনের নীতি পরিবর্তনের অভিজ্ঞতা আধুনিক বিশ্বে আগে কখনো দেখা যায়নি।

এই পরিস্থিতিতে, চীন ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে অন্য দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদার করতে শুরু করেছে। উদাহরণস্বরূপ, ২০১৮ সালে চীনের মোট রপ্তানির ১৯.২ শতাংশ ছিল যুক্তরাষ্ট্রে, যা ২০২৪ সালে কমে ১৪.৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

চীনের পক্ষ থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক বাড়ানোর চেষ্টা চলছে।

কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নিও বলেছেন, তারা ইউরোপের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করতে আগ্রহী। ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট ভন দের লেয়েন জানান, কানাডা, মেক্সিকো ও ভারতের মতো দেশগুলো ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়াতে চাইছে।

ইউরোপীয় সেন্ট্রাল ব্যাংকের প্রধান ক্রিস্টিন ল্যাগার্ডে ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার ওপর জোর দিয়েছেন।

আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থাগুলোর মতে, এই পরিবর্তনগুলো বাংলাদেশের অর্থনীতিকেও প্রভাবিত করতে পারে। বিশ্ব বাণিজ্যের এই নতুন পরিস্থিতিতে, বাংলাদেশের জন্য নতুন বাণিজ্য সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে, আবার কিছু ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জও আসতে পারে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *