জিমে যান? সাবধান! এই ভুলের কারণে বাড়ছে শারীরিক দুর্বলতা!

শারীরিক ব্যায়াম কি আপনার ভঙ্গি আরও খারাপ করে দিচ্ছে? শক্তি ও নমনীয়তার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করাটা জরুরি। যারা নিয়মিত শরীরচর্চা করেন, তারা হয়তো শক্তি বাড়ালেও শরীরের কিছু অংশে শক্তভাব অনুভব করেন।

আবার অনেক সময় শরীর সামান্য বাঁকা হয়ে যায়। এর কারণ হলো ব্যায়ামের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এড়িয়ে যাওয়া।

আসলে, ব্যায়ামের সময় অনেক কিছুই আমাদের অজান্তে ভঙ্গি বা শরীরের গঠনের ওপর খারাপ প্রভাব ফেলে। এর ফলে পেশি শক্ত হয়ে যেতে পারে, শরীরের স্বাভাবিক নাড়াচাড়ায় সমস্যা হতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদি ব্যথাও হতে পারে।

তবে কয়েকটি সাধারণ বিষয় মেনে চললে ব্যায়ামের মাধ্যমে একদিকে যেমন শক্তি বাড়ানো যাবে, তেমনি শরীরের ভঙ্গিও উন্নত করা সম্ভব। আসুন, জেনে নেওয়া যাক কীভাবে ব্যায়াম করলে ভঙ্গি ভালো রাখা যায়।

ব্যায়ামের কারণে কীভাবে ভঙ্গির ক্ষতি হয়?

আমাদের শরীর কীভাবে নড়াচড়া করছে, তার ওপর নির্ভর করে শরীরের ভঙ্গি। একটি আদর্শ ভঙ্গিতে মাথা, কাঁধ, মেরুদণ্ড এবং শ্রোণী—এগুলোর মধ্যে একটি স্বাভাবিক সমন্বয় থাকে। দুর্বল ভঙ্গি, যেমন—কাঁধ ঝুঁকে যাওয়া, পিঠ বাঁকা হওয়া এবং ঘাড় সামনের দিকে ঝুঁকে থাকার কারণ হলো পেশিগুলোর মধ্যে ভারসাম্যহীনতা।

কিছু পেশি অতিরিক্ত কাজ করে শক্ত হয়ে যায়, আবার কিছু পেশি দুর্বল হয়ে পড়ে।

দুর্ভাগ্যবশত, শক্তি বাড়ানোর ব্যায়ামের কিছু সাধারণ নিয়ম এই ভারসাম্যহীনতাকে আরও বাড়িয়ে দেয়।

যেমন, বুকের পেশি, পেটের পেশি এবং কোমর বাঁকানোর ব্যায়াম—এগুলো করলে শরীরের সামনের দিকের পেশিগুলোর শক্তি বাড়ে, কিন্তু শরীরের পেছনের দিকের পেশিগুলো, যেমন—পিঠ, নিতম্ব এবং হ্যামস্ট্রিংয়ের (পায়ের পেছনের পেশি) ব্যায়াম সেভাবে হয় না। ফলে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শরীরের সামনের দিকের পেশিগুলো শরীরের পেছনের পেশিগুলোকে দুর্বল করে দেয় এবং শরীরকে বাঁকিয়ে দেয়।

এমনকি, ব্যায়ামের সময় সঠিক ভঙ্গি বজায় না রাখলে, যেমন—ব্যায়ামের সময় কাঁধ ঝাঁকানো বা স্কোয়াট করার সময় শরীর বাঁকানো—এগুলোও শরীরের গঠনে সমস্যা তৈরি করতে পারে।

তাহলে কীভাবে ব্যায়াম করলে ভালো ফল পাওয়া যাবে?

চিন্তা নেই, আপনার পছন্দের ব্যায়ামগুলো চালিয়ে যেতে পারেন। শুধু কৌশলগতভাবে কিছু পরিবর্তন আনলেই হবে। আসুন, তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জেনে নেওয়া যাক:

১. push এবং pull ব্যায়ামের মধ্যে ভারসাম্য আনুন

ভালো ভঙ্গি বজায় রাখার সবচেয়ে সহজ উপায় হলো ব্যায়ামের মধ্যে ভারসাম্য আনা। প্রতিটি pushing মুভমেন্টের (যেমন— push-up বা ওভারহেড প্রেস) সঙ্গে একটি pulling মুভমেন্ট (যেমন—row বা band pull-apart) যোগ করুন।

Pulling মুভমেন্টগুলো আপনার পিঠের উপরের এবং মাঝের পেশিগুলোকে সক্রিয় করে, যা সামনের দিকের পেশিগুলোর কারণে ঝুঁকে যাওয়া শরীরকে সোজা রাখতে সাহায্য করে। যেহেতু আমরা দৈনন্দিন জীবনে অনেক সময় হাত দিয়ে কোনো কিছু ছুঁই, জিনিসপত্র ঠেলি বা বসে কাজ করি, তাই pull ব্যায়ামগুলো workout-এ অন্তর্ভুক্ত করা ভালো।

আপনার পায়ের সামনের এবং পেছনের পেশিগুলোর শক্তি বাড়াতেও ব্যায়ামের মধ্যে ভারসাম্য রাখা দরকার। স্কোয়াট ও লাঞ্জ আপনার কোয়াড্রিসেপস (পায়ের সামনের দিকের পেশি) এবং গ্লুটসের জন্য ভালো, তবে ডেড লিফট ও হিপ থ্রাস্টের মতো ব্যায়ামগুলোও করুন, যা হ্যামস্ট্রিংয়ের শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।

২. নমনীয়তা বাড়ানোর ব্যায়াম করুন

নমনীয়তা বাড়ানোর ব্যায়াম শুধু ওয়ার্ম আপ বা পুনরুদ্ধারের জন্য নয়—এটি ভালো ভঙ্গি বজায় রাখার এবং ভালোভাবে নড়াচড়া করার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ব্যায়ামের কারণে পেশি শক্ত হয়ে গেলে শরীরের স্বাভাবিক নাড়াচাড়ায় সমস্যা হতে পারে।

নমনীয়তা বাড়ানোর ব্যায়াম না করলে শরীরের বিভিন্ন জয়েন্টে চাপ বাড়তে পারে এবং ভঙ্গি আরও খারাপ হতে পারে।

পিঠ, কোমর এবং কাঁধের মতো শরীরের যে অংশগুলো শক্ত হয়ে যায়, সেগুলোর জন্য কিছু ব্যায়াম করতে পারেন। ব্যায়ামের আগে বা পরে মাত্র পাঁচ মিনিটের যোগা বা অন্য কোনো নমনীয়তা বাড়ানোর ব্যায়াম করলে শরীরের জড়তা কমে এবং নড়াচড়ার ধরন উন্নত হয়।

এই ব্যায়ামগুলো করতে পারেন:

  • Wall slides: পিঠের পেশিগুলোকে সক্রিয় করে এবং ঘাড় ও বুকের অতিরিক্ত সক্রিয় পেশিগুলোকে স্বাভাবিক করতে সাহায্য করে।
  • Three-way hip flexor release: কোমরকে নমনীয় করে এবং কোমরের নিচের অংশের টান কমায়।
  • Windmill twist: বুক প্রসারিত করে, কোমরের নিচের অংশের টান কমায় এবং পায়ের পেছনের পেশিগুলোকে প্রসারিত করে।

৩. সঠিক ভঙ্গিতে ব্যায়াম করুন

ব্যায়ামের সময় সঠিক ভঙ্গি বজায় রাখাটা খুবই জরুরি। সঠিক ভঙ্গিতে ব্যায়াম করলে শরীরের সঠিক নড়াচড়ার অভ্যাস তৈরি হয়, যা দৈনন্দিন জীবনে কাজে লাগে।

এক্ষেত্রে যে বিষয়গুলোর প্রতি খেয়াল রাখতে হবে:

  • মাথা ও ঘাড়ের অবস্থান: থুতনি সামনের দিকে ঝুঁকানো বা ঘাড় শক্ত করা এড়িয়ে চলুন।
  • কাঁধের অবস্থান: কাঁধ নিচু করে রাখুন এবং পিছনের দিকে সামান্য বাঁকানো রাখুন।
  • মেরুদণ্ডের সঠিক অবস্থান: মেরুদণ্ড স্বাভাবিক রাখুন, অতিরিক্ত বাঁকানো বা গোল করা এড়িয়ে চলুন।
  • শ্বাস-প্রশ্বাস: ব্যায়ামের সময় শ্বাস ছাড়ুন, যা core-কে সক্রিয় রাখতে এবং শরীরের সঠিক ভঙ্গি বজায় রাখতে সাহায্য করবে।

যদি আপনার ভঙ্গি সম্পর্কে সন্দেহ থাকে, তাহলে একজন প্রশিক্ষকের সাহায্য নিতে পারেন অথবা ব্যায়াম করার সময় নিজের ভিডিও করে দেখতে পারেন। আয়নার দিকে তাকিয়ে ব্যায়াম করার সময় ঘাড় বাঁকানো এড়িয়ে চলুন, কারণ এতে আপনার ভঙ্গি আরও খারাপ হতে পারে।

ব্যায়ামের এই ছোটখাটো পরিবর্তনগুলো আপনার শরীরে বড় ধরনের পরিবর্তন আনবে। সঠিক উপায়ে ব্যায়াম করার মাধ্যমে আপনি ভালো ভঙ্গি বজায় রাখতে পারবেন এবং ব্যথামুক্ত জীবন যাপন করতে পারবেন।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *