মহাকাশে প্রাণের অস্তিত্বের সম্ভাবনা: কে2-১৮বি গ্রহে ডিএমএস গ্যাসের সন্ধান।
সম্প্রতি, একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার আলোড়ন সৃষ্টি করেছে – আমাদের সৌরজগতের বাইরে, একটি গ্রহের বায়ুমণ্ডলে এমন একটি গ্যাসের সন্ধান পাওয়া গেছে, যা পৃথিবীর বুকে প্রাণের ইঙ্গিত বহন করে।
জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ (JWST) ব্যবহার করে বিজ্ঞানীরা কে2-১৮বি নামক একটি বহির্গ্রহের (exoplanet) বায়ুমণ্ডলে ডাইমিথাইল সালফাইড (DMS) গ্যাসের সন্ধান পেয়েছেন।
এই আবিষ্কার মহাকাশে প্রাণের অনুসন্ধান সংক্রান্ত গবেষণায় একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।
কে2-১৮বি গ্রহটি আমাদের পৃথিবী থেকে বেশ কয়েক আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত এবং এটি তার নক্ষত্রের ‘আবাসযোগ্য অঞ্চলে’ (habitable zone) অবস্থান করে।
এই অঞ্চলটি হল নক্ষত্র থেকে এমন একটি দূরত্ব, যেখানে গ্রহের পৃষ্ঠে তরল আকারে জল থাকার সম্ভাবনা থাকে, যা জীবনধারণের জন্য অপরিহার্য।
ডিএমএস গ্যাস, যা বিজ্ঞানীরা খুঁজে পেয়েছেন, সেটি পৃথিবীতে মূলত কিছু বিশেষ ধরনের শৈবাল (phytoplankton) তৈরি করে।
তাই, এই গ্যাসের উপস্থিতি অন্য কোনো গ্রহে প্রাণের সম্ভাবনা নির্দেশ করতে পারে।
তবে, এই আবিষ্কার নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে।
কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক এই আবিষ্কারকে “সৌরজগতের বাইরে জৈবিক কার্যকলাপের সবচেয়ে শক্তিশালী ইঙ্গিত” হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
যদিও, অনেক বিজ্ঞানী এখনই চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে নারাজ।
তাঁদের মতে, ডিএমএস গ্যাসের উপস্থিতি প্রাণের অস্তিত্বের চূড়ান্ত প্রমাণ নাও হতে পারে।
কারণ, এই গ্যাস অজৈব উপায়েও তৈরি হতে পারে।
উদাহরণস্বরূপ, ধূমকেতু বা আন্তঃনাক্ষত্রিক স্থানেও ডিএমএস গ্যাসের সন্ধান পাওয়া গেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন জ্যোতির্বিজ্ঞানী জশুয়া ক্রিসেনসেন-টটন মনে করেন, “আমি এই দাবি সম্পর্কে বেশ সন্দিহান এবং আমি আশা করি সংবাদমাধ্যমগুলি জ্যোতির্বিজ্ঞান এবং অ্যাস্ট্রোবায়োলজির সম্প্রদায়ের সন্দেহকে আরও ভালোভাবে প্রতিফলিত করবে।”
গবেষকরা বলছেন, কে2-১৮বি একটি ‘হাইসিয়ান’ (Hycean) জগৎ হতে পারে, যা পৃথিবীর চেয়ে আকারে বড় এবং জল দ্বারা গঠিত।
এই ধরনের গ্রহে জীবনের উপযোগী পরিবেশ থাকতে পারে।
যদিও, এই বিষয়ে অন্যান্য বিজ্ঞানীরা ভিন্নমত পোষণ করেন।
কিছু বিজ্ঞানী ডিএমএস গ্যাসের উপস্থিতি নিয়েই সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।
তাঁদের মতে, এই গ্যাসের অস্তিত্ব প্রমাণ করার জন্য আরও বিস্তারিত গবেষণা প্রয়োজন।
এমনকি, কে2-১৮বি গ্রহের গঠন এবং পরিবেশ সম্পর্কেও ভিন্ন ধারণা রয়েছে বিজ্ঞানীদের মধ্যে।
কেউ কেউ মনে করেন, এটির পৃষ্ঠদেশ পাথুরে নয় বরং গ্যাসীয় উপাদান দ্বারা গঠিত।
এই আবিষ্কারটি নিঃসন্দেহে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
তবে, এখনই নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, ডিএমএস গ্যাসের উৎস সম্পর্কে নিশ্চিত হতে এবং সেখানে প্রাণের অস্তিত্ব আছে কিনা, তা জানতে আরও গবেষণা প্রয়োজন।
এটি একটি উত্তেজনাপূর্ণ আবিষ্কার, যা আমাদের মহাবিশ্বে জীবনের অনুসন্ধানকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে গেল।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক।