যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট ভেনেজুয়েলার নাগরিকদের বিতাড়ন (deportation) সাময়িকভাবে বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে। শুক্রবার দেশটির আদালত এই সিদ্ধান্ত জানায়, যেখানে অভিবাসন কর্তৃপক্ষের হেফাজতে থাকা বেশ কয়েকজন ভেনেজুয়েলার নাগরিককে তাদের আইনজীবীদের আবেদনের প্রেক্ষিতে বিতাড়িত করার প্রস্তুতি চলছিল।
আইনজীবীরা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছিলেন, তাদের মক্কেলদের কোনো বিচারিক পর্যালোচনা ছাড়াই বিতাড়িত করার ঝুঁকি ছিল।
আদালতের নথি অনুযায়ী, শুক্রবার সকালে বিচারপতিরা এই নির্দেশ দেন। রক্ষণশীল বিচারপতি ক্ল্যারেন্স থমাস এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেন।
জানা গেছে, বিতাড়িত হতে যাওয়া ভেনেজুয়েলার পুরুষদের মধ্যে কয়েকজনকে ‘ট्रेन দে আরাগুয়া’ নামক একটি গ্যাংয়ের সদস্য হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। এই গ্যাং ভেনেজুয়েলার একটি কুখ্যাত অপরাধী দল হিসাবে পরিচিত।
তাদের বিরুদ্ধে ‘এলাইন এনিমিজ অ্যাক্ট’ (Alien Enemies Act) নামক একটি আইনের অধীনে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ছিল। এই আইনের মাধ্যমে বিদেশি নাগরিকদের, যারা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য হুমকি স্বরূপ, তাদের বিতাড়িত করার অনুমতি দেওয়া হয়।
আবেদনকারীদের আইনজীবী, আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন (ACLU), আদালতের কাছে জরুরি ভিত্তিতে আবেদন করে জানান যে টেক্সাসের ব্লু-বনেট ডিটেনশন সেন্টারে আটক কয়েক ডজন ভেনেজুয়েলার নাগরিককে বিতাড়নের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। তাদের অভিযোগ ছিল, এইসব ব্যক্তিদের গ্যাং সদস্য হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং দ্রুত বিতাড়িত করার জন্য তাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে।
আবেদনটিতে আরও বলা হয়, কয়েকজন ভেনেজুয়েলার নাগরিককে এরই মধ্যে বাসে তুলে বিতাড়নের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছিল। এমতাবস্থায়, আদালতকে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়।
এর আগে, টেক্সাসের একটি আদালত এই বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে অস্বীকার করে। তবে, সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশের ফলে বিতাড়ন প্রক্রিয়া আপাতত স্থগিত করা হয়েছে।
আবেদনকারীদের আইনজীবী জানান, বিতাড়নের শিকার হতে যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে কয়েকজনকে কাগজপত্র দেওয়া হয়েছিল, যেখানে তাদের ‘ট্রেন দে আরাগুয়া’ গ্যাংয়ের সদস্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এমনকি, তাদের মধ্যে একজনকে, যিনি ইংরেজি বলতে পারতেন না, তাকে একটি কাগজে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করা হয়।
এই ঘটনার জেরে, যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার সংস্থাগুলো, বিশেষ করে ACLU, অভিবাসন কর্তৃপক্ষের কার্যক্রমের তীব্র সমালোচনা করেছে। তারা এই বিতাড়ন প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছতা ও ন্যায়বিচারের পরিপন্থী হিসেবে বর্ণনা করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের আইন বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সুপ্রিম কোর্টের এই সিদ্ধান্ত অভিবাসন সংক্রান্ত আইনে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনতে পারে এবং ভবিষ্যতে বিতাড়ন প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে আরও সতর্ক হতে হবে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান