কাইরেন উইলসন: বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন, শুধু আমি নই, আমার পুরো পরিবার!

ক্যুরেন উইলসন: প্রতিকূলতাকে জয় করে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন, এক অনুপ্রেরণামূলক গল্প।

ইংল্যান্ডের ক্যুরেন উইলসন, যিনি সম্প্রতি বিশ্ব স্নুকার চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছেন, শুধু একজন খেলোয়াড় নন, বরং তিনি এক অসাধারণ পরিবারের প্রতিনিধি। তার এই সাফল্যের পেছনে রয়েছে কঠিন সংগ্রাম, পারিবারিক বিপর্যয় এবং সীমাহীন আত্মত্যাগ।

নর্থহ্যাম্পটনের ব্যারটস স্নুকার ক্লাবে এক সময়ের বারটেন্ডার থেকে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার এই গল্প, বাংলাদেশের ক্রীড়ামোদী এবং সাধারণ মানুষের জন্য সত্যিই অনুকরণীয়।

ক্যুরেন উইলসনের খেলোয়াড়ি জীবনের শুরুটা সহজ ছিল না। ২০১১ সালে পেশাদার সার্কিট থেকে বাদ পড়ার পর তিনি জীবিকা নির্বাহের জন্য ঐ স্নুকার ক্লাবে কাজ করতেন। কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করে তিনি আবার ঘুরে দাঁড়ান এবং ২০১৩ সালে আবার ট্যুরে ফিরে আসেন।

এরপর ২০১৫ সালে সাংহাই মাস্টার্স জেতার মাধ্যমে তিনি তার সক্ষমতার প্রমাণ দেন। এই জয় ছিল তার জীবনের মোড় ঘোরানো মুহূর্ত।

উইলসন শুধু খেলোয়াড় হিসেবেই লড়াকু ছিলেন না, বরং ব্যক্তিজীবনেও তিনি কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছেন। তার বাবার মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস, ছোট ছেলের ব্রেইন টিউমারের শঙ্কা, স্ত্রীর স্ট্রোক এবং মায়ের স্তন ক্যান্সারের মতো ঘটনাগুলো তাকে মানসিক দিক থেকে বিপর্যস্ত করে তুলেছিল।

কিন্তু তিনি সবসময় তার পরিবারের পাশে ছিলেন এবং তাদের সমর্থনই ছিল তার সবচেয়ে বড় শক্তি।

২০২৩ সালে, যখন তিনি প্লেয়ার্স চ্যাম্পিয়নশিপে খেলছিলেন, তখন তার ছোট ছেলে বেইলির স্বাস্থ্য নিয়ে গুরুতর উদ্বেগ দেখা দেয়। সৌভাগ্যবশত, পরে জানা যায় যে, তার ছেলের আসলে গম ও দুগ্ধজাত পণ্যের প্রতি এলার্জি রয়েছে।

এরপর তার স্ত্রী সোফিও একটি স্ট্রোকের শিকার হন, যদিও তিনি দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন। এর কিছুদিন পরেই তার মায়ের স্তন ক্যান্সার ধরা পড়ে। এত প্রতিকূলতার মাঝেও, ক্যুরেন ভেঙে পড়েননি।

বরং তিনি মানসিক শক্তি জুগিয়ে গিয়েছেন এবং পরিবারের পাশে থেকেছেন।

উইলসন মনে করেন, তার সাফল্যের পেছনে তার পরিবারের অবদান সবচেয়ে বেশি। তার স্ত্রী, সন্তান এবং বাবা-মা সবসময় তাকে সমর্থন জুগিয়েছেন। এমনকি, যখন তার আর্থিক অবস্থা ভালো ছিল না, তখনও তার বাবা-মা তাদের বাড়ি বন্ধক রেখে তাকে সাহায্য করেছিলেন।

এই কঠিন সময়ে তিনি হাইপনোথেরাপির সাহায্য নেন, যা তাকে মানসিক চাপ মোকাবেলা করতে সাহায্য করে। তিনি উপলব্ধি করেন, খেলাধুলা জীবনের সবকিছু নয়, বরং পরিবারই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

২০২৪ সালের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে জয়লাভের পর, ক্যুরেন উইলসন আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। তার এই জয় শুধু তার একার ছিল না, বরং পুরো পরিবারের ছিল।

তিনি বলেন, “আমি একা বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন নই, আমার পুরো পরিবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন।”

উিলসন এখন বিশ্ব র‍্যাঙ্কিংয়ে দুই নম্বরে রয়েছেন এবং তার লক্ষ্য একাধিক বিশ্ব খেতাব জয় করা। তিনি জুড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ফাইনালে প্রায় সবসময়ই জয়ী হয়েছেন।

এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “ট্রাম্প বিশ্ব এক নম্বর হওয়ায় আমার কাজটা সহজ হয়ে যায়।”

ক্যুরেন উইলসনের গল্প আমাদের শিক্ষা দেয় যে, প্রতিকূলতা জীবনের একটি অংশ। কঠোর পরিশ্রম, পরিবারের সমর্থন এবং মানসিক দৃঢ়তা থাকলে যে কোনো বাধা জয় করা সম্ভব। তার এই অনুপ্রেরণামূলক যাত্রা বাংলাদেশের তরুণ ক্রীড়াবিদদের জন্য এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *