নান্দো’স-এর অভিনব উদ্যোগ: বিশ্বজুড়ে রেস্টুরেন্টে দক্ষিণ আফ্রিকার শিল্পকর্মের সম্ভার।
বিশ্বজুড়ে খাদ্যরসিকদের কাছে পরিচিত নান্দো’স-এর নাম। বিশেষ করে তাদের ‘পেরি-পেরি’ চিকেনের খ্যাতি বিশ্বজোড়া।
তবে এই জনপ্রিয়তা ছাড়াও, নান্দো’স-এর রয়েছে ভিন্ন এক পরিচয়। দক্ষিণ আফ্রিকার শিল্পকলার প্রতি তাদের গভীর ভালোবাসাই তাদের এই অন্য পরিচয়ের জন্ম দিয়েছে।
২০০৪ সাল থেকে, এই আন্তর্জাতিক রেস্টুরেন্ট চেইনটি তাদের বিভিন্ন আউটলেটে দক্ষিণ আফ্রিকার শিল্পকর্ম প্রদর্শনের এক ব্যতিক্রমী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
বর্তমানে তাদের সংগ্রহে প্রায় ৭০০ জন শিল্পীর তৈরি করা প্রায় ৩২,০০০ শিল্পকর্ম রয়েছে।
এই বিশাল সংগ্রহ গড়ে তোলার পেছনে মূল চালিকাশক্তি ছিলেন ডিক এনথোভেন, যিনি নান্দো’স-এর আন্তর্জাতিক সম্প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন।
তিনিই এই ধারণা নিয়ে আসেন যে, রেস্টুরেন্টের পরিবেশকে শিল্পসম্মত করে তোলার মাধ্যমে গ্রাহকদের রুচি ও আগ্রহ দুটোই বাড়ানো যেতে পারে।
তার এই ভাবনা থেকেই নান্দো’স-এর রেস্টুরেন্টগুলোতে ধীরে ধীরে জায়গা করে নিতে শুরু করে দক্ষিণ আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চলের শিল্পকর্ম।
এই উদ্যোগে শুধু নান্দো’স-এর রেস্টুরেন্টগুলোই সজ্জিত হয়নি, বরং দক্ষিণ আফ্রিকার শিল্পকলার প্রসারেও এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
অসংখ্য শিল্পী, যাদের মধ্যে কিলমানি-জো লিভারসাজ, ডায়ানা হিসলপ, কাগিসো প্যাট্রিক মাউটলুয়ার মতো খ্যাতিমান শিল্পীও রয়েছেন, তাদের কাজ নান্দো’স-এর মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে পরিচিতি লাভ করেছে।
এই শিল্পীরা তাদের কাজের জন্য আর্থিক সহায়তাও পেয়েছেন, যা তাদের শিল্পী জীবনকে আরও সুসংহত করেছে।
নান্দো’স-এর এই সংগ্রহ শুধুমাত্র চিত্রকর্ম বা ভাস্কর্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়।
আসবাবপত্র এবং আলোকসজ্জার মতো শিল্পকর্মও তাদের সংগ্রহে স্থান পেয়েছে।
‘ক্রিয়েটিভ ব্লক’ নামক একটি প্রকল্পের মাধ্যমে তারা তরুণ শিল্পীদের ছোট ছোট কাঠের ব্লকের উপর কাজ করার সুযোগ করে দেয়।
এছাড়াও, স্পিয়ার আর্টস ট্রাস্টের সঙ্গে মিলে তারা শিল্পী নির্বাচন ও তাদের কাজের প্রদর্শনের ব্যবস্থা করে থাকে।
এই প্রকল্পের মাধ্যমে প্রতি বছর প্রায় ২৮০ জন শিল্পীর কাছ থেকে ২,০০০-এর বেশি শিল্পকর্ম কেনা হয়।
শিল্পকর্ম নির্বাচনের ক্ষেত্রে নান্দো’স-এর কিছু নির্দিষ্ট মানদণ্ড রয়েছে।
সাধারণত, যে শিল্পকর্মগুলো ১ মিটার বাই ১.৫ মিটারের মধ্যে, পরিবারের সবাই উপভোগ করতে পারে এবং কাঁচের ফ্রেমে বাঁধানো নয়, সেগুলোকে তারা গুরুত্ব দেয়।
নান্দো’স-এর এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসার যোগ্য।
অন্যদিকে, এটি শিল্পীদের জন্য একটি নির্ভরযোগ্য প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছে, যেখানে তারা তাদের কাজ বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরতে পারছেন।
এই ধরনের উদ্যোগ, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের সামাজিক দায়বদ্ধতার একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
তথ্য সূত্র: The Guardian