কানাডার ক্যাম্পবেল নদী: যেখানে প্রকৃতির এক বিস্ময়কর দৃশ্য অপেক্ষা করে
কানাডার ভ্যাঙ্কুভার দ্বীপের পূর্ব উপকূলে অবস্থিত ক্যাম্পবেল নদীকে প্রায়ই ‘বিশ্বের স্যামন রাজধানী’ হিসেবে অভিহিত করা হয়। এর কারণ হলো, প্রতি বছর এখানে ঝাঁকে ঝাঁকে স্যামন মাছ আসে, যা এই নদীর পানিতে এক অসাধারণ দৃশ্যের অবতারণা করে। প্রকৃতির এই মনোমুগ্ধকর দৃশ্য উপভোগ করতে এখন উপযুক্ত সময়।
ক্যাম্পেল নদীর আশেপাশে সবুজ বনভূমি, যেখানে দেখা মেলে কালো ভাল্লুক এবং ঈগল পাখির আনাগোনা। নদীর মোহনায় খেলা করে সিল মাছ। তবে সবচেয়ে আকর্ষণীয় দৃশ্য হলো স্যামন মাছের ছুটে চলা।
হাজার হাজার স্যামন মাছ, স্রোতের বিপরীতে সাঁতরা কাটে, তাদের প্রজনন ভূমির দিকে যাত্রা করে। এটি সত্যিই অসাধারণ একটি দৃশ্য, যা প্রকৃতিপ্রেমীদের মন জয় করে।
প্রতি বছর গ্রীষ্ম এবং শরৎকালে, বিশেষ করে জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে, এই নদীতে পাঁচ প্রজাতির স্যামন মাছের আগমন ঘটে – পিঙ্ক, কোহো, চিনুক, চম এবং সোকি। এদের মধ্যে কেউ কেউ হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে প্রশান্ত মহাসাগর থেকে এখানে ফেরে।
ধারণা করা হয়, ২০২৩ সালে প্রায় ১০ লক্ষাধিক পিঙ্ক স্যামন এখানে ফিরে এসেছিল।
এই সময়ে, যারা এই দৃশ্য উপভোগ করতে চান, তারা স্থানীয় ‘ওশেনফিক্স’ নামক একটি ডুবুরি দোকানের সহায়তায় স্নরকেলিং ট্যুরে অংশ নিতে পারেন। এর মাধ্যমে স্বচ্ছ জলের নিচে মাছের এই অবিরাম ছুটে চলা দেখা সম্ভব হয়।
অভিজ্ঞ ডুবুরি এবং ওশেনফিক্সের মালিক স্টিফেন নেফ-এর মতে, “এই অভিজ্ঞতা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। স্যামন মাছের সাথে পানিতে থাকাটা এক অসাধারণ অনুভূতি, যেন আপনি তাদের যাত্রার অংশ হয়ে যান।”
ক্যাম্পবেল নদীর স্বচ্ছ পানিতে ডুব দিলে দেখা যায় নানা ধরনের সামুদ্রিক প্রাণী। বিশাল আকারের অক্টোপাস, ওল্ফ ইল এবং নানা রঙের সমুদ্র শ্যাওলার বন এটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে।
বিখ্যাত সমুদ্রবিজ্ঞানী জ্যাক কুস্তো এই স্থানটিকে বিশ্বের অন্যতম সেরা ডাইভিং স্থান হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
স্নরকেলিং-এর জন্য উপযুক্ত স্থানটি হলো গোল্ড রিভার হাইওয়ের একটি লগিং ব্রিজ। এখানে ওয়েটস্যুট পরে সাঁতারুরা পানিতে নামেন এবং পাথরের বাধা, মাছ ধরার জাল ও দ্রুতগামী জলজ জীবনের মধ্যে দিয়ে এগিয়ে যান।
স্টিফেন নেফ এই ট্যুরের দুটি মূল নিয়ম উল্লেখ করেন: প্রথমত, পাথরের আঘাত এড়াতে মাথা পানির নিচে রাখতে হবে এবং দ্বিতীয়ত, কোনো স্মৃতিচিহ্ন সংগ্রহ করা যাবে না।
“সাঁতার কাটার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে, তবে ভালো সাঁতার কাটার প্রয়োজন নেই। এটি খুবই আনন্দদায়ক, তবে একই সাথে কিছুটা ভীতিও জাগাতে পারে।”
পর্যটকদের আনাগোনা কিভাবে পরিবেশের উপর প্রভাব ফেলে, সেই বিষয়ে স্টিফেন জানান, পর্যটন এবং পরিবেশ রক্ষার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা জরুরি। স্নরকেলিং সাধারণত নদীর বাস্তুতন্ত্রের উপর সামান্য প্রভাব ফেলে।
তাছাড়া, গ্রীনওয়েজ ল্যান্ড ট্রাস্টের মতো স্থানীয় সংস্থাগুলোর সাথে সহযোগিতা করে এখানকার পরিবেশ রক্ষার কাজ করা হয়। পর্যটকদের কাছ থেকে প্রাপ্ত অর্থ নদীর তীরবর্তী এলাকা পুনরুদ্ধার এবং অন্যান্য পরিবেশ সুরক্ষার কাজে ব্যবহার করা হয়।
এই অঞ্চলে পর্যটকদের আগমন একদিকে যেমন অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখে, তেমনই পরিবেশ সুরক্ষার কাজেও সহায়ক হয়। স্টিফেনের মতে, “পর্যটকদের এই অভিজ্ঞতা তাদের মনে গভীর প্রভাব ফেলে।
তারা ফিরে গিয়ে উপলব্ধি করে, প্রকৃতির এই সৌন্দর্য কত মূল্যবান এবং একে রক্ষা করা কতটা জরুরি।”
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক