ইকুয়েডরের প্রেসিডেন্ট ড্যানিয়েল নবোয়াকে হত্যার ষড়যন্ত্রের অভিযোগে দেশটিতে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। দেশটির সরকার বলছে, নির্বাচনে পরাজিত কিছু রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যোগসাজশে অপরাধী চক্র এই ষড়যন্ত্রের পরিকল্পনা করেছে।
শনিবার (২৭ এপ্রিল) প্রকাশিত এক বিবৃতিতে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, “যারা নির্বাচনে হেরেছে তাদের প্রতিশোধের অংশ হিসেবে এই ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।”
সরকারের পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়, নিরাপত্তা হুমকির কারণে সব ধরনের সতর্কতা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। প্রেসিডেন্ট নবোয়া সম্প্রতি নির্বাচনে জয়লাভ করেছেন এবং মাদক ব্যবসার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
নির্বাচনে তার প্রধান প্রতিপক্ষ ছিলেন লুইসা গঞ্জালেজ। নির্বাচনের ফলকে তিনি শুরু থেকেই প্রত্যাখ্যান করে আসছেন এবং একে জালিয়াতি হিসেবে অভিহিত করেছেন।
এই ঘটনার কয়েক দিন আগে একটি সামরিক গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, মেক্সিকোসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আসা ভাড়াটে খুনিরা প্রেসিডেন্ট নবোয়ার ওপর “সন্ত্রাসী হামলা” চালানোর পরিকল্পনা করছে। বিবৃতিতে নির্বাচনে পরাজিত “ক্ষমতা হারানো গোষ্ঠী” সাম্প্রতিক নির্বাচনের ফলকে মেনে নিতে পারেনি এবং তারা মেক্সিকো ও অন্যান্য দেশের ভাড়াটে খুনিদের (sicarios) নিয়োগ করেছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে, যাদের লক্ষ্য ছিল সরকারকে অস্থিতিশীল করা।
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, “রাষ্ট্র সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনীর সব বিভাগ, সশস্ত্র বাহিনী, জাতীয় পুলিশ এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলো একসঙ্গে কাজ করছে।”
গোয়েন্দা সূত্রের বরাত দিয়ে জানানো হয়, “হত্যার ষড়যন্ত্র, সন্ত্রাসী হামলা এবং সহিংস বিক্ষোভের মাধ্যমে রাস্তায় অস্থিরতা তৈরির পরিকল্পনা করা হচ্ছে।” এই ষড়যন্ত্রের মূল লক্ষ্য হলো “রাষ্ট্রপতি, সরকারি কর্মকর্তা এবং জনসাধারণের জীবন” উল্লেখ করা হয়েছে।
যদিও বিবৃতিতে সরাসরি কারও নাম উল্লেখ করা হয়নি, তবে ধারণা করা হচ্ছে, গঞ্জালেজের নেতৃত্বাধীন সিটিজেন রেভোলিউশন মুভমেন্টকে (RC5) ইঙ্গিত করা হয়েছে। এই দলের সঙ্গে সাবেক প্রেসিডেন্ট রাফায়েল কোরেয়ার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে।
ইকুয়েডরের গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লডিয়া শেইনবামসহ অন্যান্য বিদেশি নেতারাও এই ষড়যন্ত্রে সমর্থন দিতে পারেন।
গত বছর থেকে মেক্সিকোর সঙ্গে ইকুয়েডরের কূটনৈতিক সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে না। শেইনবাম বুধবার ঘোষণা করেন, নবোয়া প্রেসিডেন্ট পদে থাকা পর্যন্ত মেক্সিকো ইকুয়েডরের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করবে না। নির্বাচনে গঞ্জালেজকে সমর্থন করেছিলেন মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট।
উল্লেখ্য, ইকুয়েডরে সহিংসতার ঘটনা নতুন নয়। ২০২৩ সালে দেশটির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ফার্নান্দো ভিলাভিসেনসিওকে হত্যা করা হয়েছিল।
প্রতিবেশী পেরু ও কলম্বিয়া থেকে আসা মাদক পাচারকারীদের দৌরাত্ম্যেও দেশটি জর্জরিত। গত শুক্রবার ম্যানাবি প্রদেশে বন্দুকধারীদের হামলায় অন্তত ১২ জন নিহত হয়েছে।
বন্দুকধারীরা সামরিক পোশাক পরে একটি মোরগ লড়াইয়ের অনুষ্ঠানে হামলা চালায়।
গত জানুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট নবোয়া মাদক গ্যাংগুলির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য “অভ্যন্তরীণ সশস্ত্র সংঘাত” ঘোষণা করেছিলেন।
বিশ্লেষকদের মতে, আসন্ন নির্বাচনে জয়লাভের জন্য এটি ছিল তার গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। তবে লুইসা গঞ্জালেজ নির্বাচনের ফলকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন এবং কর্তৃপক্ষের কাছে পুনরায় ভোটের দাবি জানিয়েছেন।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা