স্কুলে শিশুদের এলজিবিটিকিউ+ বই পড়ানো নিয়ে বড় খবর! অভিভাবকদের কি জানানো হবে না?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ আদালতে, সুপ্রিম কোর্টে, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিশুদের পড়ানো কিছু বিষয়ে অভিভাবকদের অবহিত করা হবে কিনা, সেই বিষয়ে একটি মামলা উঠেছে। এই মামলার মূল বিষয় হলো, স্কুলের পাঠ্যক্রমে LGBTQ+ সম্পর্কিত বই অন্তর্ভুক্ত করার আগে অভিভাবকদের জানানো হবে কিনা।

খবরটি বর্তমানে সারা বিশ্বে আলোচনা সৃষ্টি করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ড অঙ্গরাজ্যের একটি এলাকার কিছু অভিভাবক এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন। তাদের মতে, এই ধরনের বিষয়গুলো অল্পবয়সী ছেলেমেয়েদের জন্য উপযুক্ত নয়।

তারা মনে করেন, সন্তানদের এই বিষয়ে শিক্ষা দেওয়ার আগে অভিভাবকদের জানানো উচিত এবং তাদের আপত্তি থাকলে সন্তানদের সেই পাঠ থেকে বিরত রাখার সুযোগ দেওয়া উচিত। তাদের যুক্তি হলো, শিশুদের উপর তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস চাপানো হচ্ছে।

অন্যদিকে, মন্টগোমারি কাউন্টি পাবলিক স্কুল কর্তৃপক্ষ এই যুক্তির বিরোধিতা করছে।

তাদের মতে, অভিভাবকদের আগে থেকে জানালে তা একটি জটিল পরিস্থিতি তৈরি করবে। শিক্ষকদের পক্ষে ক্লাসে পড়ানোর সময় কোন বিষয়ে অভিভাবকদের আপত্তি থাকতে পারে, তা আগে থেকে বোঝা কঠিন হবে।

এছাড়াও, কোনো একটি নির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে অভিভাবকদের জানাতে গেলে তা স্কুলের স্বাভাবিক পাঠদান ব্যবস্থাকে ব্যাহত করবে।

এই বিতর্কের কেন্দ্রে রয়েছে দুটি বই – ‘প্রিন্স অ্যান্ড নাইট’ এবং ‘বর্ন রেডি’। ‘প্রিন্স অ্যান্ড নাইট’ বইটিতে একজন রাজকুমারের গল্প বলা হয়েছে, যে কোনো রাজকুমারীকে বিয়ে করতে রাজি নয়।

পরে এক নাইট এর সঙ্গে তার বন্ধুত্ব হয় এবং তাদের মধ্যে প্রেম হয়। অন্যদিকে, ‘বর্ন রেডি’ বইটিতে পেনেলোপ নামের একটি মেয়ের গল্প রয়েছে, যে স্কেটবোর্ড ভালোবাসে এবং ছেলেদের মতো পোশাক পরে।

সে যখন তার মায়ের কাছে নিজেকে ছেলে হিসেবে পরিচয় দেয়, তখন তার মা তাকে সমর্থন করেন।

আদালতে এই মামলার শুনানিতে, অভিভাবকদের পক্ষ থেকে ১৯৭২ সালের একটি মামলার উদাহরণ দেওয়া হয়েছে।

সেই মামলায় আদালত, অ্যামিশ সম্প্রদায়ের শিশুদের অষ্টম শ্রেণির পর স্কুল থেকে সরিয়ে নেওয়ার অনুমতি দিয়েছিল, যদিও একটি আইনে তাদের ১৬ বছর বয়স পর্যন্ত স্কুলে যাওয়া বাধ্যতামূলক ছিল। অভিভাবকদের যুক্তি ছিল, সন্তানদের স্কুলে পাঠানো তাদের ধর্মীয় বিশ্বাসের পরিপন্থী।

অন্যদিকে, স্কুল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য হলো, কোনো বই পড়া বা কোনো ধারণা সম্পর্কে জানার অর্থ এই নয় যে, শিশুদের সেই বিষয়ে বিশ্বাস করতে বা সেই অনুযায়ী কাজ করতে বাধ্য করা হচ্ছে।

তারা মনে করে, শিশুদের একটি বহুমাত্রিক সমাজে বাস করার জন্য প্রস্তুত করতে হলে, তাদের বিভিন্ন ধরনের ধারণা ও মতামতের সঙ্গে পরিচিত করানো প্রয়োজন।

এই মামলার রায় শুধু অভিভাবকদের অধিকারের প্রশ্ন নয়, বরং এটি শিক্ষা, ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং সমাজের বিভিন্ন অংশের মানুষের মধ্যেকার সম্পর্ককেও প্রভাবিত করতে পারে।

সুপ্রিম কোর্টের এই মামলার চূড়ান্ত রায় কী হয়, সেদিকে এখন সবার দৃষ্টি।

তথ্যসূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *