মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক অঙ্গনে, বিশেষ করে তরুণ ভোটারদের আকৃষ্ট করতে কৌতুক অভিনেতা এবং অনলাইন ব্যক্তিত্বদের প্রভাব এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। সম্প্রতি শেষ হওয়া নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাফল্যের পেছনে এই ধরনের ব্যক্তিত্বদের একটা বড় ভূমিকা ছিল।
তাদের কন্টেন্ট এবং কৌশলগুলো ট্রাম্পের পক্ষে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে সমর্থন তৈরি করতে সহায়তা করেছে। বর্তমানে ডেমোক্র্যাট দলও এই ডিজিটাল দুনিয়ায় প্রবেশ করতে চাইছে এবং তাদের লক্ষ্য হলো, কীভাবে এই প্রভাবশালী মাধ্যম ব্যবহার করে ভোটারদের কাছে পৌঁছানো যায়।
প্রখ্যাত কৌতুক অভিনেতা টিম ডিলন-এর মতো ব্যক্তিত্বরা ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণার গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিলেন। তাদের ব্যঙ্গাত্মক মন্তব্য এবং নিজস্ব ভঙ্গিমা তরুণ দর্শকদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় ছিল।
ট্রাম্পের প্রচারণা দল ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোতে তাদের উপস্থিতি কাজে লাগিয়েছিল, যা প্রচলিত রাজনৈতিক ধারার বাইরে ছিল। পডকাস্টার, ইউটিউবার এবং অন্যান্য অনলাইন ব্যক্তিত্বদের মাধ্যমে ট্রাম্প তরুণ প্রজন্মের কাছে পৌঁছেছিলেন, যা ডেমোক্র্যাটদের জন্য একটি নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।
নির্বাচনের পর, ডেমোক্র্যাটরা তাদের ডিজিটাল কৌশল পর্যালোচনা করতে শুরু করেছে। তারা বুঝতে পেরেছে যে, ডানপন্থী মিডিয়ার অনলাইন কন্টেন্টের তুলনায় তাদের উপস্থিতি অনেক কম।
এই পরিস্থিতি পরিবর্তনে তারা নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করছে। ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসম এবং কেনটাকি-র গভর্নর অ্যান্ডি বেশিয়ার্স এর মতো নেতারা ইতিমধ্যে পডকাস্ট শুরু করেছেন।
মিশিগানের গভর্নর গ্রেচেন হুইটমার বাস্কেটবল বিষয়ক একটি পডকাস্টে অংশ নিয়েছিলেন। পেনসিলভেনিয়ার গভর্নর জশ শাপিরোও খেলাধুলা বিষয়ক একটি অনুষ্ঠানে ট্রাম্পকে নিয়ে আলোচনা করেছেন।
ডেমোক্র্যাটরা এখন চাচ্ছে তাদের নিজস্ব প্রভাবশালী অনলাইন জগৎ তৈরি করতে, যা রিপাবলিকানদের মোকাবিলা করতে পারে। তবে, তাদের সামনে কিছু কঠিন চ্যালেঞ্জ রয়েছে।
উদাহরণস্বরূপ, অনেক জনপ্রিয় অনলাইন শো ডেমোক্র্যাট নেতাদের সাক্ষাৎকার নিতে দ্বিধা বোধ করে, কারণ তারা তাদের দর্শকদের মধ্যে ট্রাম্প সমর্থকদের অসন্তুষ্ট করতে চায় না।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, ভোটাররা নেতাদের অকৃত্রিমতা ভালোভাবে বুঝতে পারে। তাই, ডেমোক্র্যাটদের জন্য এখন প্রয়োজন এমন কৌশল তৈরি করা, যা তাদের অনলাইন জগতে আরও বেশি পরিচিতি এনে দেবে।
অন্যদিকে, ট্রাম্পের প্রচার দল অনলাইন মিডিয়া এবং প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখেছিল। তাদের লক্ষ্য ছিল, রক্ষণশীল মিডিয়ার বাইরে সবচেয়ে বেশি দর্শক আছে এমন প্ল্যাটফর্ম খুঁজে বের করা।
বিভিন্ন পডকাস্ট এবং ইউটিউব চ্যানেলের মাধ্যমে তারা তরুণ ভোটারদের কাছে তাদের বার্তা পৌঁছে দেয়।
তবে, কিছু কৌতুক অভিনেতা এবং অনলাইন ব্যক্তিত্ব এখন রাজনৈতিক বিষয় থেকে দূরে থাকতে চাইছেন। তারা মনে করেন, বিনোদন জগতের মূল উদ্দেশ্য হলো মানুষকে আনন্দ দেওয়া, রাজনৈতিক বার্তা দেওয়া নয়।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, ভবিষ্যতে রাজনৈতিক দলগুলোকে ডিজিটাল দুনিয়ায় আরও বেশি মনোযোগ দিতে হবে। কারণ, তরুণ প্রজন্মের মধ্যে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের জন্য এই মাধ্যমটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন