আমার পায়ের কাছে মানুষগুলো, আমি বললাম ‘ওঠো’। স্তব্ধ সবাই: সুমির বিভীষিকা

ইউক্রেনের সুমি শহরে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় নিহত ৩৫ জন, আহত শতাধিক, শোকের ছায়া।

ইউক্রেনের সুমি শহরে রাশিয়ার চালানো ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় নিহত হয়েছে অন্তত ৩৫ জন, যাদের মধ্যে শিশুও রয়েছে। আহত হয়েছেন আরও ১২৯ জন।

স্থানীয় সময় গত পাম সানডে’তে (ঈস্টার আগের রবিবার) চালানো এই হামলায় সাধারণ মানুষ হতাহত হয়েছে। খবরটি নিশ্চিত করেছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, রাশিয়ার ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রগুলো বিস্ফোরিত হওয়ার পর চারদিকে ধ্বংসস্তূপ তৈরি হয়। রাস্তায় পড়ে ছিল ছিন্নভিন্ন মরদেহ।

একটি বাসের ভেতরে থাকা যাত্রীদের অনেকের শরীর ঝলসে যায়। অনেকে গুরুতর আহত অবস্থায় কাতরাচ্ছিল।

আহতদের মধ্যে একজন, আল্লা শিরশোনকোভা নামের এক নারী জানান, তিনি যখন ৬২ নম্বর বাসে করে শহর থেকে নিজের গ্রামের দিকে যাচ্ছিলেন, তখনই এই হামলা হয়।

তিনি বলেন, “আচমকা বিকট শব্দে আমি জ্ঞান হারাই। যখন জ্ঞান ফেরে, তখন দেখি চারপাশে ধোঁয়া আর ধ্বংসস্তূপ। আমার চারপাশে মৃতদেহগুলো পড়ে ছিল।”

তিনি আরও জানান, “আমি তাদের (আহতদের) উঠার জন্য বলছিলাম, কিন্তু তারা কোনো সাড়া দেয়নি।”

আরেকজন প্রত্যক্ষদর্শী, ৭২ বছর বয়সী হেনাদি স্মোলিয়ারভ জানান, রাশিয়ার এই হামলা গণহত্যার শামিল।

তিনি বলেন, “তারা ইউক্রেনীয়দের সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করতে চাইছে। তারা আমাদের ঘৃণা করে।”

হামলার শিকার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ছিলেন স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, বৃদ্ধ এবং নারীসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষ। ধ্বংসস্তূপের মাঝে নিহত শিশুদের খেলনাগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল, যা হৃদয়বিদারক দৃশ্য তৈরি করেছে।

এদিকে, হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে ইউক্রেন যুদ্ধের দ্রুত সমাধানে বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা। তারা হতাহতদের পরিবারের প্রতি গভীর শোক প্রকাশ করেছে এবং আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেছে।

অন্যদিকে, এই হামলার বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মন্তব্য নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। তিনি এই হামলাকে ‘ভুল’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। যা নিয়ে অনেকে ট্রাম্পের ইউক্রেন নীতি এবং রাশিয়ার প্রতি তার দুর্বলতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

বর্তমানে, ইউক্রেন যুদ্ধ একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে এসে দাঁড়িয়েছে। একদিকে যেমন উভয়পক্ষের মধ্যে শান্তি আলোচনার সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে আসছে, তেমনিভাবে রাশিয়ার সামরিক অভিযানও বাড়ছে।

এমন পরিস্থিতিতে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হচ্ছে, যাতে এই যুদ্ধ বন্ধ করা যায় এবং সাধারণ মানুষের জীবন রক্ষা করা যায়।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *