আতঙ্কে তিউনিসিয়া! বিরোধী নেতাদের এত বছরের জেল?

গণতন্ত্রের সূতিকাগার খ্যাত তিউনিসিয়ায় বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের কারাদণ্ড: কর্তৃত্ববাদের পথে আরও এক ধাপ?

তিউনিসিয়ার একটি আদালত দেশটির রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী এবং আইনজীবীদের দীর্ঘ কারাদণ্ড দিয়েছে। এই ঘটনার জেরে দেশটির প্রেসিডেন্ট কাইস সাইয়েদের বিরুদ্ধে স্বৈরাচারী শাসনের অভিযোগ আরও জোরালো হয়েছে। বিরোধী পক্ষ এই বিচারকে সাজানো এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে অভিহিত করেছে।

শনিবারের শুনানিতে ব্যবসায়ী কামেল লতিফকে সর্বোচ্চ ৬৬ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। বিরোধী দলের নেতা খায়েম তুর্কির ৪8 বছরের কারাদণ্ড হয়েছে। অভিযুক্তদের আইনজীবী এই তথ্য জানিয়েছেন। এছাড়াও, বিরোধী দলের প্রভাবশালী নেতা গাজী শাওয়াসি, ইসাম চেবি, জাওয়াহার বেন এমবারেক এবং রিধা বেলহাজকে ১৮ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তাঁরা সবাই ২০২৩ সাল থেকে কারাগারে বন্দী রয়েছেন।

মার্চ মাস থেকে শুরু হওয়া এই বিচারে ৪০ জনের বেশি ব্যক্তির বিচার চলছিল। এদের মধ্যে ২০ জনের বেশি ইতিমধ্যে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন।

২০১৯ সালে ক্ষমতা আসার পর প্রেসিডেন্ট সাইয়েদ জনগণের সরাসরি ভোটে দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হন। বিরোধী পক্ষের অভিযোগ, ২০২১ সালে পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়া এবং ২০২২ সালে বিচার বিভাগের সর্বোচ্চ কাউন্সিল ভেঙে দেওয়ার মাধ্যমে সাইয়েদ বিচার বিভাগের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছেন।

গাজী শাওয়াসির ছেলে ইউসুফ শাওয়াসি এই রায়ের প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “আমরা এই ধরনের অবিচার এবং প্রতিহিংসামূলক রায়ে মোটেও অবাক নই, যা আসলে বিরোধী নেতাদের কণ্ঠরোধ করার চেষ্টা।”

আহমেদ সোয়াব, যিনি অভিযুক্তদের আইনজীবী ছিলেন, রায় ঘোষণার আগে বলেছিলেন, “আমি এমন বিচার দেখিনি। এটা একটা প্রহসন, রায় প্রস্তুত ছিল, এবং যা ঘটছে তা খুবই নিন্দনীয় ও লজ্জাজনক।”

সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, অভিযুক্তরা দেশের স্থিতিশীলতা নষ্ট এবং প্রেসিডেন্ট সাইয়েদকে ক্ষমতাচ্যুত করার চেষ্টা করছিলেন। এই তালিকায় সাবেক সরকারি কর্মকর্তাসহ গোয়েন্দা বিভাগের সাবেক প্রধান কামেল গুইজানির নামও রয়েছে।

প্রধান বিরোধী দল ন্যাশনাল স্যালভেশন ফ্রন্টের নেতা নেজিব চেবি শুক্রবার বলেন, “সরকার বিরোধীদের অপরাধী বানাতে চাইছে।” তিনিও এই মামলার অন্যতম আসামি।

২০২৩ সালে প্রেসিডেন্ট সাইয়েদ এই রাজনীতিবিদদের “বিশ্বাসঘাতক ও সন্ত্রাসী” হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন। তিনি আরও বলেছিলেন, যে বিচারক তাঁদের খালাস দেবেন, তাঁরাও তাঁদের সহযোগী।

এই মামলার সঙ্গে জড়িত বিরোধী নেতারা অভিযোগ করেছেন যে, প্রেসিডেন্ট সাইয়েদ ২০২১ সালে একটি অভ্যুত্থান ঘটিয়েছেন এবং এই মামলা সাজানো হয়েছে মূলত বিরোধী দলকে দমন করতে এবং এক ব্যক্তির শাসন কায়েম করার জন্য। তাঁদের দাবি, তাঁরা আরব বসন্তের সূচনাভূমি হিসেবে পরিচিত তিউনিসিয়ায় গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে বিরোধী দলগুলোকে একত্রিত করার চেষ্টা করছিলেন।

বর্তমানে তিউনিসিয়ার অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা কারাগারে রয়েছেন, তাঁদের মধ্যে ফ্রি কনস্টিটিউশনাল পার্টির নেতা আবির্ মুসি এবং এন্নাহদা পার্টির প্রধান রাশিদ ঘানুচি অন্যতম, যাঁরা প্রেসিডেন্ট সাইয়েদের কট্টর সমালোচক হিসেবে পরিচিত।

তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *