বিখ্যাত অভিনেত্রী অলিভিয়া উইলিয়ামস, যিনি ‘দ্য ক্রাউন’ (The Crown) সহ বেশ কিছু জনপ্রিয় সিনেমায় অভিনয় করেছেন, সম্প্রতি তার স্বাস্থ্য নিয়ে এক মর্মস্পর্শী অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে চলা রোগ এবং ভুল চিকিৎসার কারণে তিনি এখন আর ক্যান্সার মুক্ত হতে পারবেন না।
তার এই সংগ্রামের গল্প আমাদের স্বাস্থ্যখাতের দুর্বলতা এবং রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে সনাক্তকরণের গুরুত্বের বিষয়টি নতুন করে মনে করিয়ে দেয়।
২০১৮ সালে, ৪৬ বছর বয়সে অলিভিয়া জানতে পারেন যে তিনি প্যানক্রিয়াটিক ক্যান্সার বা অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সারে আক্রান্ত। কিন্তু এই রোগ নির্ণয়ের আগে, বিগত চার বছর ধরে তিনি বিভিন্ন শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন।
শরীরের ব্যথা, ক্লান্তি এবং দীর্ঘস্থায়ী ডায়রিয়ার মতো সমস্যা নিয়ে তিনি চিকিৎসকের দ্বারস্থ হয়েছিলেন, কিন্তু কোনো সঠিক রোগ নির্ণয় হয়নি। যুক্তরাজ্য, আমেরিকা সহ বিভিন্ন দেশের ১০ জন ডাক্তারের পরামর্শের পরেও তার রোগ ধরা পড়েনি।
তাকে লুপাস, আইবিএস (IBS) এবং মেনোপজের মতো সমস্যা হয়েছে বলে ভুলভাবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। এমনকি একজন চিকিৎসক তাকে মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষারও পরামর্শ দিয়েছিলেন।
অবশেষে, লস অ্যাঞ্জেলের একজন ডাক্তারের মাধ্যমে তার অগ্ন্যাশয়ে VIPoma নামক একটি বিরল টিউমার ধরা পড়ে। অলিভিয়া জানান, যদি সঠিক সময়ে রোগ নির্ণয় করা যেত, তাহলে হয়তো অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ক্যান্সার সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করা যেত এবং তিনি ক্যান্সার মুক্ত হতে পারতেন।
কিন্তু বর্তমানে, ক্যান্সার তার লিভারে ছড়িয়ে পড়েছে, যা ক্যান্সারের ক্ষেত্রে খুবই উদ্বেগের বিষয়। বর্তমানে তিনি নিয়মিত চিকিৎসার অংশ হিসেবে ‘মাইক্রোওয়েভ অ্যাবলেশন’ নিচ্ছেন, যার মাধ্যমে শরীরের ক্যান্সার কোষগুলো ধ্বংস করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
চিকিৎসার পাশাপাশি, অলিভিয়া এখন প্যানক্রিয়াটিক ক্যান্সার সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে এবং এর প্রাথমিক সনাক্তকরণের জন্য একটি সহজ পরীক্ষার ব্যবস্থা করার জন্য কাজ করছেন। তিনি জানান, এই ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীদের গড় আয়ু খুবই কম, যা প্রায় তিন মাস।
সঠিক সময়ে রোগ সনাক্তকরণ সম্ভব হলে, এই পরিস্থিতি পরিবর্তন করা যেতে পারে। তিনি মনে করেন, সাধারণ স্বাস্থ্য পরীক্ষার মতোই, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে এই ক্যান্সার সনাক্ত করা সম্ভব।
অলিভিয়া বর্তমানে ‘প্যানক্রিয়াটিক ক্যান্সার ইউকে’ নামক একটি দাতব্য সংস্থার সাথে যুক্ত হয়ে এই রোগের বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরি এবং তহবিল সংগ্রহের চেষ্টা করছেন। তিনি তার শরীরের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাওয়ার পরেও তিনি এখনো স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারছেন, যা একটি “মিরাকল”-এর চেয়ে কম কিছু নয়।
আমাদের দেশেও ক্যান্সার একটি মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যা। তাই, অলিভিয়া উইলিয়ামসের এই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে, আমাদের প্রত্যেককে স্বাস্থ্য সচেতন হতে হবে।
কোনো শারীরিক সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে এবং রোগ নির্ণয়ের জন্য প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে। এছাড়াও, ক্যান্সার গবেষণা এবং সচেতনতামূলক কার্যক্রমে আমাদের সকলকে এগিয়ে আসা উচিত।
তথ্য সূত্র: পিপলস