পৃথিবীতে প্রাণের রহস্য! ভেঙে গেল বিজ্ঞানীরা!

মহাকাশে প্রাণের সন্ধান: উল্কাপিণ্ড বেন্নু থেকে প্রাণের উপাদান আবিষ্কার।

সৌরজগতের একেবারে শুরুতে, কয়েক বিলিয়ন বছর আগে, এক জলময়, নোনা পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘুরছিল। এরপর এক ভয়াবহ সংঘর্ষে সেটি ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যায়।

সেই ধ্বংসাবশেষ থেকেই তৈরি হওয়া একটি পাথরের নাম হল ‘বেন্নু’। সম্প্রতি, এই বেন্নু গ্রহাণু থেকে পৃথিবীর বুকে আনা হয়েছে মূল্যবান কিছু নমুনা, যা প্রাণের উৎপত্তির রহস্য উন্মোচনে নতুন দিগন্ত দেখাচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা, নাসা’র পাঠানো ‘ওসাইরিস-রেক্স’ (OSIRIS-Rex) নামের একটি মহাকাশযান এই বেন্নু গ্রহাণু থেকে পাথর ও ধুলো সংগ্রহ করে পৃথিবীতে ফিরিয়ে এনেছে। সেই নমুনা বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় কিছু গুরুত্বপূর্ণ রাসায়নিক উপাদানের সন্ধান পেয়েছেন।

এর মধ্যে রয়েছে অ্যামিনো অ্যাসিড, যা প্রোটিনের মূল গঠন উপাদান, এবং নিউক্লিওবেস, যা ডিএনএ (DNA) ও আরএনএ (RNA) তৈরি করে। এছাড়া ফসফেট, অ্যামোনিয়া এবং শুকনো লেকের তলদেশের মতো লবণাক্ত উপাদানও সেখানে পাওয়া গেছে।

এই আবিষ্কারগুলি বিজ্ঞানীদের মনে নতুন করে আশার সঞ্চার করেছে। তাঁদের ধারণা, বেন্নুর মতো গ্রহাণুগুলো সম্ভবত কয়েক কোটি বছর আগে পৃথিবীর বুকে আছড়ে পড়েছিল, আর সেগুলোর মাধ্যমেই প্রাণের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদানগুলো পৃথিবীতে এসেছিল।

লন্ডন এর ন্যাচারাল হিস্টোরি মিউজিয়ামের (Natural History Museum) একজন বিজ্ঞানী অধ্যাপক সারা রাসেল বলেছেন, “বেন্নুর নমুনাগুলো আমাদের সম্পূর্ণভাবে বিস্মিত করেছে। এর মধ্যে থাকা অণু এবং খনিজ পদার্থের বৈচিত্র্য আগে পাওয়া অন্য কোনো মহাজাগতিক নমুনার থেকে সম্পূর্ণ আলাদা।

আগামী ১৬ই মে থেকে লন্ডনের এই জাদুঘরে ‘স্পেস: কুড লাইফ এক্সিস্ট বিয়ন্ড আর্থ?’ (Space: Could Life Exist Beyond Earth?) শীর্ষক একটি প্রদর্শনী শুরু হতে যাচ্ছে।

যেখানে এই আবিষ্কারগুলি বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হবে। এই প্রদর্শনীতে দর্শকরা বেন্নু থেকে আনা পাথরের নমুনাগুলি ছুঁয়ে দেখতে পারবেন।

এছাড়াও, মঙ্গল গ্রহ এবং বৃহস্পতি ও শনির উপগ্রহগুলোতে প্রাণের অনুসন্ধানের বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হবে।

বিজ্ঞানীরা মনে করেন, বেন্নুর মত গ্রহাণুগুলো হয়তো শুধু পৃথিবীতেই নয়, সৌরজগতের অন্য কোনো গ্রহেও প্রাণের সূচনা করতে সাহায্য করেছে।

উদাহরণস্বরূপ, তারা বিশেষভাবে মনোযোগ দিচ্ছেন মঙ্গল গ্রহের দিকে। কারণ, সেখানে একসময় জল ছিল এবং জীবনের উপযোগী পরিবেশও ছিল।

এছাড়া, বৃহস্পতির উপগ্রহ ইউরোপা এবং শনির উপগ্রহ এনসেলাডাসের মতো স্থানগুলোতেও বিজ্ঞানীরা প্রাণের সম্ভাবনা দেখেন।

মহাকাশে প্রাণের অস্তিত্ব খুঁজে বের করার চেষ্টা এখনো চলছে।

সম্প্রতি, জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের (James Webb Space Telescope) মাধ্যমে K2-18b নামক একটি বহির্গ্রহে (exoplanet) এমন কিছু রাসায়নিক পদার্থের সন্ধান পাওয়া গেছে, যা পৃথিবীতে শুধুমাত্র জীবনের উপস্থিতিতেই তৈরি হয়।

এই আবিষ্কারগুলি হয়তো একদিন আমাদের একাকীত্বের ধারণা বদলে দেবে।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, সৌরজগতের বাইরে প্রাণের প্রমাণ পাওয়া কঠিন হলেও, আমাদের সৌরজগতের ভেতরে প্রাণের অস্তিত্ব খুঁজে বের করা তুলনামূলকভাবে সহজ।

যদি অন্য কোনো গ্রহে প্রাণের সন্ধান পাওয়া যায়, তবে সেই জীবনকে আমরা কীভাবে দেখব, তা একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। হয়তো আমাদের নিজেদের জীবনের মতোই তাদেরও সম্মান করতে হবে।

তথ্য সূত্র: The Guardian

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *