চা-দানি: রুপকথার মতো, কিভাবে চা-এর সরঞ্জাম ফ্যাশনে ফিরছে?

চা-এর পেয়ালা: এক সময়ের সাধারণ ঘরোয়া জিনিস, যা এখন ফ্যাশন এবং ঐতিহ্যের প্রতীক।

এক সময়ের অতি সাধারণ একটি জিনিস, যা কিনা ছিল কেবল চা বানানোর অপরিহার্য উপাদান, সেই চা-এর পেয়ালা বা টি-পট (teapot), এখন ফ্যাশন দুনিয়ায় নতুন করে ফিরে এসেছে। শুধু তাই নয়, এটি এখন ডিজাইন এবং শৈল্পিকতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

এই পরিবর্তন এসেছে মূলত তরুণ প্রজন্মের মধ্যে চা-এর প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি এবং ‘কটেজকোর’ (cottagecore) ও ‘টেবিলস্কেপিং’-এর (tablescaping) মতো নতুন ধারার ফ্যাশন-এর কারণে।

বিশ্বজুড়ে অনলাইনে পুরাতন জিনিস বিক্রির বাজারগুলোতে (যেমন: Vinterior) গত ছয় মাসে টি-পট-এর বিক্রি ছয় গুণ বেড়েছে। শুধু তাই নয়, যুক্তরাজ্যের বিখ্যাত দোকান জন লুইসেও (John Lewis) এই ধরনের পেয়ালার বিক্রি ২২ শতাংশ বেড়েছে।

একটি জরিপে দেখা গেছে, ব্রিটেনের প্রায় ২৬ শতাংশ তরুণ মনে করেন, টি-পট আবার ফ্যাশনে ফিরে এসেছে।

এই পরিবর্তনের কারণ হলো, মানুষ এখন তাদের ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির প্রতি আরও বেশি আগ্রহী হচ্ছে। ‘কটেজকোর’-এর মতো নান্দনিক ধারায়, যা প্রকৃতির কাছাকাছি জীবনযাপনের ধারণা দেয়, টি-পট-এর ব্যবহার বাড়েছে।

ইনস্টাগ্রামে আকর্ষণীয় টেবিল সাজানোর ছবি দেওয়া, যা ‘টেবিলস্কেপিং’ নামে পরিচিত, এর ফলেও টি-পটের চাহিদা বেড়েছে।

টি-পট এখন শুধু চা পরিবেশনের পাত্র নয়, এটি শিল্পী এবং ডিজাইনারদের জন্য এক নতুন ক্যানভাস। সম্প্রতি মিলান ডিজাইন সপ্তাহে (Milan Design Week) টি-পট-এর ডিজাইন নিয়ে প্রদর্শনী হয়েছে।

যেখানে বিভিন্ন শিল্পী তাদের কল্পনার রঙে রাঙিয়েছেন এই চা-এর পেয়ালাগুলোকে। স্প্যানিশ ফ্যাশন হাউস লোয়ে (Loewe)-এর একটি প্রদর্শনীতে সিরামিক শিল্পী এডমন্ড ডি ওয়াল (Edmund de Waal) এবং ডিজাইনার ডেভিড চিপারফিল্ডের (David Chipperfield) তৈরি করা টি-পট-এর ডিজাইন দেখা গেছে।

এই পরিবর্তনের ঢেউ লেগেছে লন্ডনেও। আগামী মাসের লন্ডন ক্রাফট উইক-এ (London Craft Week) টি-পট-কে কেন্দ্র করে বিভিন্ন প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে।

যেখানে দেখা যাবে নানান রঙের এবং আকারের টি-পট।

চা-এর পেয়ালা সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি শুধু একটি পাত্র নয়, বরং সংস্কৃতি, শিল্প এবং মানুষের মধ্যে সম্পর্কের প্রতিচ্ছবি। বিখ্যাত ‘নিউবি টিজ’-এর (Newby Teas) চেয়ারম্যান নির্মল শেঠিয়ার মতে, “চা-এর পেয়ালা তৈরি এবং এর নকশার মধ্যে সমাজের মূল্যবোধ, রুচি এবং আচার-অনুষ্ঠানগুলো প্রতিফলিত হয়।

তাঁর সংগ্রহে বিশ্বের সবচেয়ে দামি টি-পট-টি রয়েছে, যা ১,৬৫৮টি হীরা এবং ৩৮৬টি রুবি দিয়ে তৈরি।

এই পরিবর্তনের পেছনে কারুশিল্পের প্রতি মানুষের আগ্রহ অন্যতম কারণ। বর্তমানে অনেক মানুষ তাদের অবসর সময়ে কারুশিল্পের প্রতি ঝুঁকছেন।

জাপানের একজন শিল্পী তাকেশি ফুজির মতে, টি-পট-এর মতো জিনিসগুলো স্থানীয় কারিগরদের দক্ষতা এবং সংস্কৃতিকে তুলে ধরে।

এই সময়ে, যখন যন্ত্রনির্ভর উৎপাদন শিল্পের জয়জয়কার, তখন হাতে তৈরি জিনিসের কদর বেড়েছে। টি-পট-এর এই নতুন যাত্রা, ঐতিহ্য এবং আধুনিকতার এক দারুণ মেলবন্ধন।

তথ্য সূত্র: The Guardian

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *