জেরুজালেমে ঐতিহ্যপূর্ণ ‘হলি ফায়ার’ অনুষ্ঠানে হাজারো মানুষের সমাগম।
প্রাচীন রীতি মেনে জেরুজালেমের পবিত্র সেপালচার্চে (Church of the Holy Sepulchre) প্রতি বছর অনুষ্ঠিত হয় ‘হলি ফায়ার’ অনুষ্ঠান। এই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সমবেত হন হাজার হাজার খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী মানুষ।
তাদের বিশ্বাস, যিশু খ্রিস্টের পুনরুত্থানের স্মরণে এই পবিত্র আগুনের শিখা স্বয়ং ঈশ্বরদত্ত।
ঐতিহ্য অনুযায়ী, অনুষ্ঠানটি শুরু হয় যখন গ্রিক অর্থোডক্স সম্প্রদায়ের প্রধান (গ্রিক প্যাট্রিয়ার্ক) একটি বিশেষ স্থানে প্রবেশ করেন, যা ‘হলি এডিকিউল’ নামে পরিচিত। এই স্থানটি যিশুর সমাধিস্থলের কাছাকাছি অবস্থিত বলে ধারণা করা হয়।
এরপর তিনি সেখান থেকে মোমবাতি হাতে বেরিয়ে আসেন এবং উপস্থিত সকলের মধ্যে সেই আলো বিতরণ করেন। এই পবিত্র শিখা পরে বিশেষ বিমানে করে বিশ্বের বিভিন্ন অর্থোডক্স সম্প্রদায়ের কাছে পাঠানো হয়।
এই অনুষ্ঠানটি এক হাজার দুইশ’ বছরেরও বেশি সময় ধরে পালিত হচ্ছে। বহু শতাব্দী ধরে চলা এই উৎসবের সাক্ষী থাকতে প্রতি বছর বিপুল সংখ্যক মানুষের সমাগম হয়।
তবে, এই বিশাল জনসমাগমের কারণে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগও রয়েছে। ১৮৩৪ সালে, অনুষ্ঠানে পদদলিত হয়ে প্রায় চারশ’ তীর্থযাত্রীর মৃত্যু হয়েছিল। সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি এড়াতে, ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি অংশগ্রহণকারীদের সংখ্যা সীমিত করার চেষ্টা করেছে।
নিরাপত্তার কারণ দর্শিয়ে কর্তৃপক্ষের এই পদক্ষেপে চার্চের নেতারা অসন্তুষ্ট। তাদের অভিযোগ, এর মাধ্যমে জেরুজালেমের পবিত্র স্থানগুলোর স্থিতাবস্থা ক্ষুণ্ন করা হচ্ছে।
শনিবারের অনুষ্ঠানেও ছিল ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনীর কড়া উপস্থিতি। তীর্থযাত্রীদের প্রবেশ পথে নিরাপত্তা চৌকি বসানো হয়েছিল।
অন্যদিকে, গাজায় ইসরায়েলের ১৮ মাসের যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে অনেক ভক্ত এই বছর অনুষ্ঠানে আসতে পারেননি বলে জানা গেছে। পবিত্র সেপালচারের চাবি রক্ষক আদিব জৌদের (Adeeb Joude) ভাষ্যমতে, “এ বছর তীর্থযাত্রীর তুলনায় পুলিশের সংখ্যা বেশি ছিল।”
উল্লেখ্য, ১৯৬৭ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের সময় ইসরায়েল পূর্ব জেরুজালেম দখল করে এবং পরে আন্তর্জাতিকভাবে এই অঞ্চলকে নিজেদের অন্তর্ভুক্ত করে।
ফিলিস্তিনিরা তাদের ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রের রাজধানী হিসেবে পূর্ব জেরুজালেমকে চায়। পুরাতন শহরে ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে, বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে এবং এমনকি কিছু ক্ষেত্রে একই ধর্মের অনুসারীদের মধ্যেও উত্তেজনা বিদ্যমান।
ইসরায়েল সরকার বরাবরই নিজেদের ইহুদি, খ্রিস্টান এবং মুসলিম—সব ধর্মাবলম্বীর জন্য উপাসনার স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে দাবি করে।
তবে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে স্থানীয় খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক বেশ কঠিন হয়ে উঠেছে। এদের অধিকাংশই ফিলিস্তিনি খ্রিস্টান, এবং সংঘাতের কারণে তাদের অনেকেই দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা