মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে স্বাস্থ্যখাতে পরিবর্তনের ইঙ্গিত, ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে কয়েক কোটি মানুষ।
যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান দল স্বাস্থ্যখাতে বড় ধরনের পরিবর্তনের কথা ভাবছে, যা দেশটির ‘মেডিকায়েড’ (Medicaid) নামক সরকারি স্বাস্থ্য বীমা কর্মসূচিতে কাটছাঁটের ইঙ্গিত দেয়। এই পদক্ষেপের ফলে দেশটির কয়েক কোটি মানুষের স্বাস্থ্য পরিষেবা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
বিশেষ করে, যারা আগে থেকেই স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত, তাদের জন্য এটি উদ্বেগের কারণ হতে পারে।
মেডিকায়েড মূলত কম আয়ের মানুষের জন্য একটি স্বাস্থ্য বীমা প্রকল্প। রিপাবলিকানরা এই প্রকল্পের সুযোগ সীমিত করার কথা ভাবছেন, যার মূল লক্ষ্য হলো- বারাক ওবামার আমলে প্রণীত ‘অ্যাফোর্ডেবল কেয়ার অ্যাক্ট’ (Affordable Care Act) বা সংক্ষেপে ‘ওবামাকেয়ার’-এর কিছু অংশ পরিবর্তন করা।
ওবামাকেয়ারের অধীনে, মেডিকেইডের সুবিধাভোগীর সংখ্যা বাড়ানো হয়েছিল, যাতে বেশি সংখ্যক মানুষ স্বাস্থ্য বীমার আওতায় আসতে পারে।
তবে, রিপাবলিকানদের এই সিদ্ধান্তের ফলে তাদের সমর্থক এলাকার মানুষজনও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন। কারণ, অনেক রিপাবলিকান সদস্যের নির্বাচনী এলাকাতেও মেডিকেইডের সুবিধাভোগীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য।
কাইজার ফ্যামিলি ফাউন্ডেশন (KFF)-এর তথ্য অনুযায়ী, যে সমস্ত এলাকায় মেডিকেইড সুবিধার আওতায় আসা মানুষের সংখ্যা জাতীয় গড়ের চেয়ে বেশি, তার মধ্যে অনেকগুলোতেই রিপাবলিকানদের প্রভাব রয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বাজেট ঘাটতি কমাতে গিয়ে রিপাবলিকানরা এমন একটি পদক্ষেপ নিতে চাইছে, যা তাদের জন্য রাজনৈতিকভাবে বেশ কঠিন পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। কারণ, মেডিকেইডে কাটছাঁট করলে একদিকে যেমন বিপুল পরিমাণ অর্থ সাশ্রয় হবে, তেমনই অন্যদিকে, এর ফলস্বরূপ দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে।
এই বিতর্কের মধ্যে, বিভিন্ন গবেষণা সংস্থা ভিন্ন ভিন্ন হিসাব দিয়েছে। কোনো কোনো সংস্থার মতে, মেডিকেইডের সুবিধা কমালে প্রায় ৩০ লাখ মানুষ স্বাস্থ্য বীমা থেকে বঞ্চিত হতে পারেন।
আবার, কোনো কোনো সংস্থার ধারণা, এই সংখ্যা ১ কোটি ১০ লাখ পর্যন্ত হতে পারে। এর ফলে, ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হবেন এবং স্বাস্থ্যখাতে সংকট আরও বাড়বে।
এই পরিবর্তনের কারণ হিসেবে রিপাবলিকানরা প্রায়ই ওবামাকেয়ারের সমালোচনা করে থাকেন। তাদের যুক্তি হলো, এই প্রকল্পের মাধ্যমে যারা সুবিধা পাচ্ছেন, তাদের মধ্যে অনেকে কাজ করার মতো সামর্থ্য রাখেন।
তাই, তাদের সরকারি সহায়তা বন্ধ করা উচিত। তবে, সমালোচকরা বলছেন, এই ধরনের পদক্ষেপ নিলে দরিদ্র ও দুর্বল শ্রেণির মানুষের জীবন আরও কঠিন হয়ে পড়বে।
উদাহরণস্বরূপ, লুইজিয়ানা অঙ্গরাজ্যের কথা বলা যায়। সেখানকার মেডিকেইড সম্প্রসারণের ফলে অনেক মানুষ উপকৃত হয়েছেন। এমনকি, গ্রামীণ এলাকার হাসপাতালগুলোতেও এর ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
এখন যদি এই সুবিধা কমানো হয়, তাহলে সেখানকার স্বাস্থ্যখাতে বড় ধরনের বিপর্যয় নেমে আসার আশঙ্কা রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, স্বাস্থ্যখাতে পরিবর্তন আনার আগে এর সম্ভাব্য প্রভাবগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিবেচনা করা উচিত। কারণ, এর সঙ্গে দেশের সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য ও জীবন-জীবিকার বিষয়টি জড়িত।
কোনো হঠকারী সিদ্ধান্ত নিলে তা দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর দীর্ঘমেয়াদী নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
তথ্যসূত্র: সিএনএন