ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পরমাণু চুক্তি নিয়ে আলোচনা বর্তমানে নতুন মোড় নিয়েছে। ওমানের মধ্যস্থতায় হওয়া এই আলোচনাগুলোতে দুই দেশের মধ্যে বেশ কিছু বিষয়ে ঐকমত্যে আসার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। তবে এখনো অনেক জটিলতা রয়েছে, এবং চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সহজ হবে না বলেই মনে করা হচ্ছে।
সম্প্রতি, ইতালির রোমে অনুষ্ঠিত হওয়া বৈঠকে ইরানের প্রতিনিধি এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। এর আগে ওমানের রাজধানী মাস্কাটে উভয়পক্ষের মধ্যে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
এখন টেকনিক্যাল আলোচনার জন্য আগামী বুধবার ওমানে বিশেষজ্ঞ দলগুলো মিলিত হওয়ার কথা রয়েছে। এরপর উচ্চ পর্যায়ের আরও কয়েকটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে একটি চূড়ান্ত চুক্তিতে পৌঁছানোর চেষ্টা করা হবে।
মূলত, এই আলোচনাগুলোর কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে তিনটি প্রধান বিষয়: ইরানের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা, ইরানের পরমাণু কর্মসূচি এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তা। ইরানের উপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞাগুলো অত্যন্ত জটিল এবং বহুস্তরবিশিষ্ট।
প্রতিটি স্তরের সঙ্গে ইরানের পরমাণু কর্মসূচির শর্ত বা নিশ্চয়তা জড়িত। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র চাইছে ইরান যেন তাদের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ প্রক্রিয়া সীমিত করে।
২০১৫ সালের জয়েন্ট কমপ্রিহেনসিভ প্ল্যান অফ অ্যাকশন (জেসিপিওএ) ছিল প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রশাসনের একটি গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক সাফল্য। এই চুক্তির শর্তানুসারে, ইরান তাদের পরমাণু কর্মসূচির নিয়মিত পর্যবেক্ষণে রাজি হয়েছিল, যার বিনিময়ে তাদের উপর থেকে কিছু পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়।
তবে, প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৮ সালে এই চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে বের করে নেন এবং ইরানের উপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন।
বর্তমানে আলোচনায় উঠে আসা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ইরান কত শতাংশ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করছে এবং তাদের কাছে কী পরিমাণ ইউরেনিয়ামের মজুদ রয়েছে। পারমাণবিক চুল্লিগুলোতে সাধারণত ৩ থেকে ৫ শতাংশ পর্যন্ত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করা হয়।
কিন্তু ইরানের হাতে বর্তমানে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত সমৃদ্ধ করা ইউরেনিয়াম মজুত আছে, যা বোমা তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় ৯০ শতাংশের থেকে কম। জেসিপিওএ চুক্তি অনুযায়ী, ইরান ৩.৬৭ শতাংশ পর্যন্ত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে পারতো এবং তাদের কাছে ৩০০ কেজি ইউরেনিয়ামের মজুদ রাখার অনুমতি ছিল।
মার্কিন কর্মকর্তারা অবশ্য আলোচনায় ইতিবাচক ইঙ্গিত দিয়েছেন। তারা মনে করছেন, প্রযুক্তিগত আলোচনাগুলোতে অগ্রগতি হয়েছে। ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রী আব্বাস আরাকচিও বলেছেন, “আমরা কিছু নীতি এবং লক্ষ্য সম্পর্কে ভালো ধারণা তৈরি করতে সক্ষম হয়েছি।”
তবে, তিনি সতর্ক করে বলেছেন, এখনই চূড়ান্ত কিছু বলা যাচ্ছে না। ইরান চাইছে যুক্তরাষ্ট্র যেন চুক্তিতে অটল থাকার নিশ্চয়তা দেয়, অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র চাচ্ছে ইরান যেন ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বন্ধ করে।
এই আলোচনার গতিপ্রকৃতি বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, ইরানের সঙ্গে যেকোনো ধরনের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এবং জ্বালানি তেলের দামের উপর এর প্রভাব পড়তে পারে।
এছাড়া, মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তা পরিস্থিতির উপরও এই আলোচনার ফলাফল প্রভাব ফেলবে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা