গাজায় ইসরায়েলের ‘স্বপ্নের’ বাস্তবায়ন: ট্রাম্পের হাত ধরে?

গাজা উপত্যকা: ট্রাম্পের মন্তব্যের প্রেক্ষাপটে ইসরায়েলের দীর্ঘদিনের পরিকল্পনা
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা নিয়ে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক মন্তব্যগুলো ইসরায়েলের একটি পুরোনো পরিকল্পনার প্রতি সমর্থন জুগিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের এই ধরনের বক্তব্য গাজায় ফিলিস্তিনিদের বিতাড়িত করে সেখানে ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার দীর্ঘদিনের একটি পরিকল্পনারই যেন বৈধতা দিয়েছে।

গাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে ট্রাম্পের দৃষ্টিভঙ্গি :
ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে গাজা উপত্যকাকে ‘গুরুত্বপূর্ণ এলাকা’ হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন। এমনকি ফিলিস্তিনিদের এলাকাটি ছেড়ে ‘অন্যত্র’ চলে যাওয়ার কথাও বলেছিলেন তিনি।

অনেকে মনে করেন, ট্রাম্পের এই ধরনের মন্তব্যগুলো ছিল ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন।

গাজার ওপর ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা:
গাজা উপত্যকার ওপর ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। ১৯৪৮ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের পর থেকে বিভিন্ন সময়ে ইসরায়েল গাজার নিয়ন্ত্রণ নিতে চেয়েছে।

সেখানকার ফিলিস্তিনি জনবসতি সরিয়ে দেওয়ারও চেষ্টা চলেছে। এমনকি গাজাকে একসময় ‘ইসরায়েলের হাওয়াই’ হিসেবে পরিচিত করারও পরিকল্পনা করা হয়েছিল, যাতে করে সেখানে ইসরায়েলি বসতি স্থাপন সহজ হয়।

বিতাড়নের বিভিন্ন পরিকল্পনা:
গাজায় ফিলিস্তিনিদের বিতাড়িত করার জন্য বিভিন্ন সময়ে নানা ধরনের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এর মধ্যে ছিল ফিলিস্তিনিদের অন্য দেশে পাঠিয়ে দেওয়া, তাদের জন্য ‘স্বেচ্ছায়’ গাজা ত্যাগ করার সুযোগ তৈরি করা ইত্যাদি।

ইসরায়েলের নেতারা বিভিন্ন সময়ে বলেছেন, তাঁরা চান, গাজার ফিলিস্তিনিরা যেন এলাকা ছেড়ে চলে যায়।

ট্রাম্পের নীতির প্রভাব:
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ট্রাম্পের নীতিগুলো ইসরায়েলের এই পুরোনো পরিকল্পনাকে আরও উৎসাহিত করেছে।

ট্রাম্পের বক্তব্যগুলো যেন ইসরায়েলের দীর্ঘদিনের ‘জাতিগত নির্মূল’ পরিকল্পনার প্রতি সমর্থন জুগিয়েছে।

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট:
১৯৪৮ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের পর গাজা উপত্যকা মিশরের সামরিক শাসনের অধীনে আসে। এরপর ১৯৬৭ সালের যুদ্ধে ইসরায়েল গাজার নিয়ন্ত্রণ নেয়।

সেই সময় থেকেই ফিলিস্তিনিদের বিতাড়ন এবং তাদের বসতি উচ্ছেদের পরিকল্পনা আরও জোরদার হয়।

ট্রাম্পের দৃষ্টিভঙ্গির সমালোচনা:
ট্রাম্পের এই ধরনের পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নীতির পরিপন্থী।

আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একটি মূলনীতি হলো, গাজাসহ ফিলিস্তিনের অন্যান্য অঞ্চলের মানুষের তাদের নিজেদের ভূমিতে আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার রয়েছে।

ভবিষ্যতের শঙ্কা:
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, ট্রাম্পের এই সমর্থন ভবিষ্যতে গাজায় ফিলিস্তিনিদের জন্য আরও কঠিন পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে।

ইসরায়েল হয়তো ফিলিস্তিনিদের ‘স্থানান্তর’, ‘পুনর্বাসন’ অথবা ‘স্বেচ্ছায়’ দেশত্যাগে বাধ্য করতে পারে।

উপসংহার:
ট্রাম্পের নীতিগুলো কার্যত ফিলিস্তিনিদের অধিকারকে অগ্রাহ্য করে ইসরায়েলের সম্প্রসারণবাদী নীতির প্রতি সমর্থন জুগিয়েছে।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, এর ফলে ভবিষ্যতে গাজায় ফিলিস্তিনিদের জন্য আরও খারাপ পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *