ব্রিটিশ এমপিদের একাংশ সংসদীয় কাজের পাশাপাশি অন্য পেশায় সময় ব্যয় করছেন, এমন একটি খবর সম্প্রতি আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে বেশ আলোচিত হয়েছে। যুক্তরাজ্যে, যেখানে সংসদ সদস্যরা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হন, সেখানে অনেক এমপি তাদের মূল দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি অন্য কাজ করছেন।
কেউ কেউ টেলিভিশন অনুষ্ঠানে কাজ করেন, কেউ আবার আইনজীবী বা পরামর্শক হিসেবেও পরিচিত।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, চলতি বছরের শুরু থেকে সাত জন এমপি সপ্তাহে অন্তত একটি কর্মদিবসের সমান সময় অন্য পেশায় ব্যয় করেছেন। এই সাত জন এমপির সম্মিলিত কর্মঘণ্টা হিসাব করলে দেখা যায়, তাঁরা অন্তত ৩০০ ঘণ্টা অন্য কাজ করেছেন।
তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আয় করেছেন সংস্কারপন্থী দলের নেতা, নিগেল ফারাগে। তিনি একই সঙ্গে মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, টিভি উপস্থাপক, লেখক এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও সক্রিয়।
ফারাগে বর্তমানে সপ্তাহে প্রায় ২৪ ঘণ্টা অন্য কাজ করেন। তবে, সংসদে তাঁর উপস্থিতি তুলনামূলকভাবে কম।
পাবলিক হুইপের তথ্য অনুযায়ী, ফারাগে পার্লামেন্টের ভোটে মাত্র এক-তৃতীয়াংশ সময় উপস্থিত ছিলেন, যেখানে অন্য এমপিদের গড় উপস্থিতি ছিল ৭২ শতাংশ।
অন্যদিকে, কনজারভেটিভ এমপি জর্জ ফ্রিম্যান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেন এবং সপ্তাহে প্রায় সাড়ে ১১ ঘণ্টা ব্যয় করেন।
তিনি জানান, বাইরের কাজ তাঁর নির্বাচনী এলাকার মানুষের জন্য কাজ করতে কোনো বাধা সৃষ্টি করে না। তাঁর মতে, যুক্তরাজ্যের বিজ্ঞান বিষয়ক বিভিন্ন উদ্যোগে অর্থ সংগ্রহের জন্য তিনি সহায়তা করেন।
এছাড়াও, লি অ্যান্ডারসন নামে একজন এমপি জিবি নিউজে উপস্থাপক ও লেখক হিসেবে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও সময় দেন।
আইন পেশার সঙ্গে যুক্ত জিওফ্রে কক্স এবং জন হেইজও সপ্তাহে কিছু সময় অন্য কাজে ব্যয় করেন।
লেবার পার্টির এমপি জেমস নাইশ একজন সম্পত্তি বিক্রয় প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ছিলেন, তবে তিনি এই কাজটি এখন কমিয়ে দিয়েছেন।
ডেমোক্রেটিক ইউনিনিস্ট পার্টির কার্লা লকহার্ট নামের এক এমপি তাঁর খামারে কাজ করেন এবং সপ্তাহে প্রায় আট ঘণ্টা সময় দেন।
এই এমপিদের অতিরিক্ত কাজের বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে বিতর্ক চলছে। কেউ কেউ মনে করেন, এমপিদের শুধু সংসদীয় কার্যক্রমের দিকেই মনোযোগ দেওয়া উচিত।
তাঁদের মতে, অন্য কোনো পেশায় যুক্ত থাকলে স্বার্থের সংঘাত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। লেবার পার্টির একজন সদস্য দ্বিতীয় চাকরি নিষিদ্ধ করার পক্ষে মত দিয়েছেন।
তাঁর মতে, এমপিদের অন্য কোনো কাজের সুযোগ থাকলে তা সমাজের জন্য ভালো নয়।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে এমপিদের এই ধরনের অতিরিক্ত কাজের বিষয়টি বিশেষভাবে নজর রাখা উচিত।
কারণ, জনপ্রতিনিধিদের মূল দায়িত্ব হলো জনগণের সেবা করা এবং তাঁদের স্বার্থ রক্ষা করা। অতিরিক্ত কাজের কারণে যদি তাঁদের মূল দায়িত্বে অবহেলা হয়, তবে তা গণতন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান