যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপের শিকার হওয়া বিদেশি শিক্ষার্থীদের পক্ষে আইনি লড়াই
যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন কর্তৃপক্ষের একটি পদক্ষেপের কারণে কয়েকশ বিদেশি শিক্ষার্থীর বৈধ ছাত্রত্ব হারানোর আশঙ্কার মধ্যে তাঁদের অধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য দুইটি গুরুত্বপূর্ণ মামলা দায়ের করা হয়েছে। জানা গেছে, এই শিক্ষার্থীদের বেশিরভাগই ভারত ও চীনের নাগরিক। তাঁদের ভিসা বাতিল করা হয়েছে এবং তাঁদের ছাত্রত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছে, যার ফলে তাঁরা যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে এবং বসবাস করতে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসন নীতির কড়া অবস্থানের কারণে এক হাজারের বেশি শিক্ষার্থীর ভিসা অথবা ছাত্রত্ব বাতিল করা হয়েছে। এর মধ্যে অনেকের বিরুদ্ধে সামান্য অপরাধের অভিযোগ ছিল, যেমন পুরোনো কিছু মামলা অথবা ট্রাফিক আইন ভাঙার মতো ঘটনা।
মামলাগুলিতে অভিযোগ করা হয়েছে যে, শিক্ষার্থীদের ছাত্রত্ব বাতিল করা বেআইনি। এই সিদ্ধান্তের ফলে তাঁদের আটক অথবা দেশ থেকে বিতাড়িত করার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। আইনজ্ঞরা বলছেন, ভিসা থাকার পরেও ছাত্রত্ব কেড়ে নেওয়া হলে, তা শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ জীবনের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলবে।
মামলাগুলোর কেন্দ্রবিন্দু হলো একটি শিক্ষার্থীর ভিসা এবং ছাত্রত্বের মধ্যেকার পার্থক্য। যুক্তরাষ্ট্রে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন ধরনের ভিসা রয়েছে, যার মধ্যে এফ-১ ভিসা অন্যতম। এই ভিসা শিক্ষার্থীদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অনুমতি দেয়। কিন্তু একবার প্রবেশের পর, তাঁদের পড়াশোনা চালিয়ে যেতে হয় এবং কিছু নিয়মকানুন মেনে চলতে হয়।
আদালতে দায়ের করা অভিযোগ অনুযায়ী, সরকার এই শিক্ষার্থীদের ছাত্রত্ব কেড়ে নিয়েছে, যা তাঁদের আটক বা বিতাড়িত করার কারণ হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন বিষয়ক সংস্থা ইউএসসিআইএস (USCIS) সাধারণত একজন ব্যক্তির যুক্তরাষ্ট্রে থাকার বৈধতা নির্ধারণ করে থাকে, কিন্তু ভিসা দেয় স্টেট ডিপার্টমেন্ট।
একটি মামলায়, জর্জিয়ার একটি আদালত সরকারের প্রতি নির্দেশ দিয়েছে, যাতে শিক্ষার্থীদের ছাত্রত্ব অবিলম্বে পুনর্বহাল করা হয়। এই মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবীরা আদালতের এই সিদ্ধান্তে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন।
আদালতের নথি অনুযায়ী, শিক্ষার্থীদের স্টুডেন্ট অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ ভিজিটর সিস্টেম (SEVIS) থেকে সরিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে তাঁদের ছাত্রত্ব বাতিল করা হয়েছে। এসইভিস হলো একটি অনলাইন ডাটাবেস, যেখানে স্কুলগুলো আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের সম্পর্কে তথ্য জমা দেয়। বাতিল হওয়া শিক্ষার্থীদের এসইভিস রেকর্ডে উল্লেখ করা হয়েছে যে, তাঁরা হয় “ফেলিং টু মেইনটেইন স্ট্যাটাস” অথবা তাঁদের ভিসা বাতিল করা হয়েছে।
মামলায় আরও বলা হয়েছে, কিছু শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ থাকলেও, তাঁদের কারোই কোনো গুরুতর অপরাধের জন্য দোষী সাব্যস্ত করা হয়নি। এমনকি কারো বিরুদ্ধে এক বছরের বেশি কারাদণ্ডের মতো কোনো অভিযোগও নেই।
উদাহরণস্বরূপ, জর্জিয়ার একজন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে একটি পুরোনো পারিবারিক সহিংসতার মামলা ছিল, যা পরে খারিজ হয়ে যায়। অন্য একজন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ট্রাফিক আইন ভঙ্গের অভিযোগ ছিল। আইনজীবীরা বলছেন, ভিসা বাতিল ছাত্রত্ব বাতিলের কারণ হতে পারে না। তাঁদের মতে, ছাত্রত্ব বাতিলের এই সিদ্ধান্ত শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা বন্ধ করে স্ব-ইচ্ছায় দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য করার উদ্দেশ্যে নেওয়া হয়েছে।
দ্বিতীয় মামলাটি নিউ হ্যাম্পশায়ারে দায়ের করা হয়েছে। এতে প্রাথমিকভাবে পাঁচজন শিক্ষার্থীর প্রতিনিধিত্ব করা হচ্ছে। এই মামলাটি একটি শ্রেণির প্রতিনিধিত্ব করার জন্য আবেদন জানিয়েছে, যার অর্থ হলো, একই পরিস্থিতিতে থাকা আরও অনেক শিক্ষার্থী এতে যুক্ত হতে পারবে। জানা গেছে, নিউ হ্যাম্পশায়ার, মেইন, ম্যাসাচুসেটস, রোড আইল্যান্ড এবং পুয়ের্তো রিকোতে অন্তত ১১২ জন শিক্ষার্থীর এফ-১ স্ট্যাটাস বাতিল করা হয়েছে।
মামলার বিবাদীদের মধ্যে রয়েছেন সরকারি বিভিন্ন কর্মকর্তাও। এই মামলাতেও শিক্ষার্থীদের ছাত্রত্ব অবৈধভাবে বাতিলের অভিযোগ আনা হয়েছে।
আবেদনকারীরা বলছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো হয় সামান্য, নয়তো তা ভিত্তিহীন। আইনজীবীরা মনে করেন, ছাত্রত্ব বাতিলের এই সিদ্ধান্তগুলো বিদ্যমান নিয়ম-নীতির লঙ্ঘন।
তথ্য সূত্র: সিএনএন