একদিন, অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া রাজ্যের একটি ছোট্ট শহরে, অপরিচিত এক ব্যক্তির উদারতা এক তরুণের মন ছুঁয়ে গিয়েছিল। সেই তরুণের প্রেমিকার সঙ্গে প্রথম ডেটিং-এর স্মৃতি আজও অমলিন, কারণ একটি সাধারণ ঘটনার মধ্যে লুকিয়ে ছিল গভীর এক মানবিকতা।
ঘটনাটি ঘটেছিল ওয়াঙ্গারাত্তায়, যেখানে তরুণটি তার অসুস্থ দাদীর দেখাশোনা করছিলেন। সেই সূত্রে হাতে তেমন কোনও রোজগার ছিল না তাঁর। উইকেন্ডে ছুটি পেলেই তিনি প্রেমিকা মারির সঙ্গে দেখা করতে যেতেন।
একদিন, মারিকে নিয়ে তিনি গিয়েছিলেন মাউন্ট বাফেলোতে, প্রকৃতির মনোরম পরিবেশে সময় কাটানোর জন্য। ফেরার পথে, তাঁরা একটি পেট্রোল পাম্পে (fuel station) থামেন। তরুণটি গাড়ির তেল ভরতে যান, আর মারি গাড়িতেই ছিলেন।
তেল ভরে বিল পরিশোধ করতে গিয়ে বিপত্তি বাধে। তাঁর কার্ডে টাকা ছিল না। সেসময় মোবাইল ফোনের চল তেমন ছিল না, তাই কাউকে ফোন করে সাহায্য করারও উপায় ছিল না। তরুণটি চরম অস্বস্তিতে পড়লেন, কারণ প্রেমিকার সামনে এই ধরনের পরিস্থিতি তাঁর কাছে ছিল খুবই বিব্রতকর।
তিনি অসহায় দৃষ্টিতে গাড়ির দিকে তাকালেন। ঠিক তখনই, পাম্পের এক কর্মচারী এগিয়ে এলেন। তাঁর বয়স ছিল হয়তো কুড়ি-বাইশের কাছাকাছি।
পরিস্থিতি বুঝতে পেরে তিনি এগিয়ে এসে তরুণটিকে সাহায্য করার প্রস্তাব দিলেন। তিনি তাঁর নিজের পকেট থেকে তেলের দাম পরিশোধ করতে চাইলেন।
তরুণটি প্রথমে রাজি হননি। কিন্তু ওই কর্মচারী তাঁকে জোর করে রাজি করান। তিনি জানান, এমন ঘটনা মাঝে মাঝে ঘটে থাকে এবং এতে চিন্তার কিছু নেই। সেই কর্মীর আচরণে গভীর উপলব্ধির ছাপ ছিল।
তিনি যেন পরিস্থিতিটা খুব ভালোভাবেই বুঝতে পারছিলেন। পরে, তরুণটি যখন মারির কাছে ফিরে এলেন, তখন তিনি কিছুই বলেননি, লজ্জায় তাঁর মুখ লাল হয়ে গিয়েছিল।
বাড়ি ফেরার পথে তিনি মনে মনে ঠিক করেন, যত দ্রুত সম্ভব ওই কর্মীর টাকা ফেরত দিতে হবে। সেই রাতে তিনি অস্ট্রেলিয়ান ২০ ডলার (বর্তমান বিনিময় হারে প্রায় ১,৬০০ টাকার সমান) পরিশোধ করেন।
সেই বয়সে, এই সামান্য পরিমাণ টাকাও তাঁর কাছে অনেক বড় ছিল। সম্ভবত ওই কর্মচারীও পড়াশোনার পাশাপাশি পার্টটাইম কাজ করতেন, তাই তাঁর কাছেও হয়তো এই টাকাটা অনেক মূল্যবান ছিল।
এরপর, বহু বছর কেটে গেছে। সেই পেট্রোল পাম্পের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময়, তরুণটি প্রায়ই সেই কর্মীর সঙ্গে দেখা করার জন্য উন্মুখ থাকতেন। কিন্তু আর কখনো তাঁর দেখা হয়নি।
তবে, সেই ঘটনাটি তাঁর মনে গভীর দাগ কেটে গেছে। একজন অপরিচিত মানুষের এই উদারতা তাঁকে ভালো মানুষ হতে অনুপ্রাণিত করেছে। আজও, তিনি সেই ঘটনার কথা স্মরণ করেন, আর বিস্মিত হন মানুষের প্রতি মানুষের এমন নিঃস্বার্থ ভালোবাসায়।
তথ্য সূত্র: The Guardian