বন্ধু মহলে হিসাব-নিকাশ: সম্পর্কের গভীরতা বজায় রেখে বিল ভাগাভাগির উপায়।
বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের মাঝে আর্থিক বিষয়গুলো মাঝে মাঝে জটিলতা তৈরি করতে পারে। বিশেষ করে যখন একসঙ্গে কাটানো সময়ের হিসাব-নিকাশ আসে।
বন্ধুদের সঙ্গে কোনো রেস্টুরেন্টে খেতে গেলে বা ঘুরতে গেলে বিল ভাগাভাগি নিয়ে অনেক সময় ভুল বোঝাবুঝি হয়, যা সম্পর্কের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। সম্প্রতি হওয়া কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, আর্থিক বিষয় নিয়ে বন্ধুদের মধ্যে মতের অমিল হলে সম্পর্কের অবনতি হতে পারে।
তাই, বন্ধুত্বের সম্পর্ক অটুট রাখতে হলে বিল ভাগাভাগির ক্ষেত্রে কিছু বিষয় মনে রাখা প্রয়োজন।
প্রথমেই আসা যাক, বন্ধুদের সঙ্গে আলোচনা করার প্রসঙ্গে। বিল দেওয়ার আগে সবার সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করা দরকার।
কার কত খরচ হয়েছে, সে বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা রাখা জরুরি। সবাই যদি একসঙ্গে বিল দিতে রাজি থাকে, তাহলে কোনো সমস্যা নেই।
তবে, কারো যদি আর্থিক সীমাবদ্ধতা থাকে, তবে বিষয়টি আলোচনা করে নেওয়া ভালো। কে কত টাকা দেবেন, তা আগে থেকেই ঠিক করে নিলে পরে কোনো দ্বিধা থাকে না।
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, অনেক সময় বন্ধুদের মধ্যে আর্থিক অসামঞ্জস্য থাকে। একজনের হয়তো বেশি আয়ের সুযোগ আছে, অন্যজনের হয়তো কম।
সেক্ষেত্রে বিল ভাগাভাগির ক্ষেত্রে বিষয়টি মাথায় রাখা দরকার। সবাই যদি সমানভাবে বিল দিতে না পারে, তাহলে আলোচনার মাধ্যমে একটি সমাধানে আসা যেতে পারে।
হয়তো, যিনি বেশি দিতে পারছেন, তিনি কিছু বেশি দিলেন, আর অন্য বন্ধু তার সাধ্য অনুযায়ী দিলেন।
বর্তমানে বিল ভাগাভাগি করার জন্য বিভিন্ন অ্যাপ পাওয়া যায়, যা এই কাজটি সহজ করে তোলে। “স্প্লিটওয়াইজ” (Splitwise) এর মতো অ্যাপগুলো ব্যবহার করে কে কার কাছে কত টাকা পাবে, তার হিসাব রাখা যায়।
এই অ্যাপগুলোতে আপনি একটি গ্রুপ তৈরি করতে পারেন এবং খরচের হিসাব যোগ করতে পারেন। এছাড়া, বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোও এখন বিল পরিশোধের জন্য বিভিন্ন সুবিধা নিয়ে আসছে।
যেমন, আপনি আপনার মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাপ ব্যবহার করে সহজেই বন্ধুদের মধ্যে টাকা ভাগ করে নিতে পারেন। এই ধরনের অ্যাপগুলো ব্যবহারের ফলে হিসাব রাখতে সুবিধা হয় এবং পরে কোনো ঝামেলা পোহাতে হয় না।
তবে, শুধু অ্যাপ ব্যবহার করলেই হবে না, আলোচনারও প্রয়োজন রয়েছে। বন্ধুদের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করে বিল ভাগাভাগির একটি সঠিক উপায় বের করা উচিত।
কারো যদি আর্থিক সমস্যা থাকে, তবে তাকে সে বিষয়ে কথা বলতে উৎসাহিত করতে হবে। অনেক সময় দেখা যায়, বন্ধুদের মধ্যে কেউ হয়তো আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে মুখ ফুটে কিছু বলতে পারে না।
তাই, বন্ধু হিসেবে একে অপরের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া দরকার।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, হিসাব-নিকাশের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা বজায় রাখা। আপনি যদি কারো কাছ থেকে টাকা পান, তবে তাকে দ্রুত সে কথা জানান।
এতে সম্পর্কের মধ্যে কোনো ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হবে না। নিয়মিতভাবে হিসাব আপ-টু-ডেট রাখা উচিত।
সবশেষে, মনে রাখতে হবে, বন্ধুত্বের সম্পর্ক অমূল্য। সামান্য কিছু আর্থিক বিষয় নিয়ে যেন এর কোনো ক্ষতি না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
আলোচনা, বোঝাপড়া এবং কিছু স্মার্ট উপায় অবলম্বন করে বন্ধুত্বের সম্পর্ককে আরও মজবুত করা যায়।
তথ্য সূত্র: The Guardian