মার্কিন মুলুকে রুশ গুপ্তচর! চাঞ্চল্যকর তথ্য ফাঁস

রাশিয়ান গুপ্তচর: যারা ছদ্ম পরিচয়ে পশ্চিমা বিশ্বে বাস করতেন।

ঠান্ডা যুদ্ধের সময়ে, সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং পরবর্তীতে রাশিয়ার গোয়েন্দা সংস্থা কেজিবি (KGB) তাদের ‘অবৈধ’ গুপ্তচরদের পশ্চিমা বিশ্বে পাঠিয়েছিল। এইসব গুপ্তচররা সাধারণ মানুষের মতো জীবন যাপন করতেন, কিন্তু তাদের আসল উদ্দেশ্য ছিল নিজেদের ছদ্ম পরিচয়ে তথ্য সংগ্রহ করা।

সম্প্রতি, এই ধরনের গুপ্তচরদের জীবন নিয়ে লেখা শॉन ওয়াকারের (Shaun Walker) একটি বই প্রকাশিত হয়েছে, যার নাম ‘দ্য ইলিগ্যালস: রাশিয়াস মোস্ট অডাসিয়াস স্পাইস অ্যান্ড দ্য প্লট টু ইনফিলট্রেট দ্য ওয়েস্ট’। বইটিতে লেখক এই গুপ্তচরদের জীবন এবং তাদের কার্যক্রমের বিস্তারিত চিত্র তুলে ধরেছেন।

বইটির একটি প্রধান চরিত্র হলেন আন্দ্রে বেজরুকভ (Andrei Bezrukov) এবং তার স্ত্রী, যিনি আনা ফোলি (Ann Foley) নামে পরিচিত ছিলেন। তারা আসলে রাশিয়ান গুপ্তচর ছিলেন, যারা ডন হিথফিল্ড (Don Heathfield) এবং অ্যান হিথফিল্ড (Ann Heathfield) নামে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটসে বসবাস করতেন।

তাদের দুইটি সন্তান ছিল, যাদের আসল পরিচয় সম্পর্কে কোনো ধারণা ছিল না। ২০০৯ সালে, এফবিআই (FBI) তাদের আসল পরিচয় উদ্ঘাটন করে এবং গ্রেপ্তার করে। এরপর তাদের সন্তানদেরও রাশিয়াতে ফেরত পাঠানো হয়।

ওয়াকারের বইয়ে এই গুপ্তচরদের প্রশিক্ষণ, তাদের ব্যবহৃত কৌশল এবং পশ্চিমা সমাজে তাদের মিশে যাওয়ার পদ্ধতিগুলো তুলে ধরা হয়েছে। কেজিবি এইসব গুপ্তচরদের বিশেষভাবে প্রশিক্ষণ দিতো, যাতে তারা পশ্চিমা সংস্কৃতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে এবং দীর্ঘদিন ধরে গোপনীয়তা বজায় রাখতে পারে।

তাদের যোগাযোগের জন্য বিশেষ সংকেত ব্যবহার করা হতো, যেমন কোনো ল্যাম্পপোস্টের উপর সাদা চক চিহ্ন অথবা বেঞ্চের উপর নীল চক চিহ্ন। এই সংকেতগুলো তাদের হ্যান্ডলারদের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যম ছিল।

তবে, ওয়াকারের মতে, এই গুপ্তচরদের কার্যক্রম সব সময় সফল ছিল না। সোভিয়েত ইউনিয়ন পশ্চিমা বিশ্বকে ভালোভাবে বুঝতে ব্যর্থ হয়েছিল। কেজিবি চেয়েছিল এমন গুপ্তচর, যারা পশ্চিমা সমাজের সঙ্গে মিশে যেতে পারবে, কিন্তু তাদের মধ্যে আদর্শগত দৃঢ়তাও থাকতে হবে।

অনেক গুপ্তচর এই চাপের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারেননি।

সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর, কিছু আদর্শবাদী গুপ্তচর হতাশ হয়ে রাশিয়ায় ফিরে আসেন। তারা দেখেন, তাদের ত্যাগের বিনিময়ে যে পরিবর্তন তারা চেয়েছিলেন, তা ঘটেনি। পরবর্তীতে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন (Vladimir Putin) ‘অবৈধ’ গুপ্তচরদের সম্মান জানান এবং তাদের কার্যক্রমকে রাশিয়ার গর্ব হিসেবে তুলে ধরেন।

তিনি তাদের ‘দৃঢ় নৈতিকতা’ এবং ‘চরিত্রের দৃঢ়তার’ প্রশংসা করেন।

ওয়াকারের বইয়ে উল্লেখ করা হয়েছে যে, এইসব গুপ্তচরদের কাছ থেকে সংগৃহীত তথ্য সব সময় সঠিকভাবে বিশ্লেষণ করা হতো না। এমনকি, তাদের কাজের তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য ফলও পাওয়া যায়নি।

বইটির শেষে, লেখক একজন পশ্চিমা গোয়েন্দা কর্মকর্তার সাক্ষাৎকার উল্লেখ করেছেন। সেই সাক্ষাৎকারে, ওই কর্মকর্তা স্বীকার করেন যে, এখনো কতজন ‘অবৈধ’ গুপ্তচর পশ্চিমা বিশ্বে সক্রিয় আছে, তা বলা কঠিন।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *