ডিজিটাল বিশ্বে মানুষের পরিচয় যাচাই করার এক নতুন প্রচেষ্টা নিয়ে এসেছে স্যাম অল্টম্যানের সমর্থনপুষ্ট একটি সংস্থা। তাদের উদ্ভাবিত ‘অরবি’ নামের একটি যন্ত্র মুখের স্ক্যান করে অনলাইনে ব্যবহারকারীর ‘আসল’ পরিচয় নিশ্চিত করতে চায়।
বর্তমানে বিশ্বজুড়ে যেখানে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা এআই-এর দৌরাত্ম্য বাড়ছে, সেখানে এই ধরনের প্রযুক্তি নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ। তবে, এর ভালো-মন্দ দুটো দিকই রয়েছে।
‘অরবি’ মূলত মুখ ও চোখের ছবি তোলে এবং সেই বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি স্বতন্ত্র ‘ওয়ার্ল্ড আইডি’ তৈরি করে। এই আইডি ব্যবহার করে বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে ব্যবহারকারীর পরিচয় প্রমাণ করা যাবে।
উদাহরণস্বরূপ, কোনো ব্যাংক যদি তার গ্রাহকের পরিচয় যাচাই করতে চায়, তাহলে নিরাপত্তা প্রশ্নের পরিবর্তে এই ওয়ার্ল্ড আইডি ব্যবহার করতে পারবে, যা জালিয়াতি থেকে গ্রাহকদের রক্ষা করতে সহায়ক হবে।
তবে, এই প্রযুক্তির কিছু সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। সম্প্রতি, সিএনএন-এর একজন সাংবাদিক এই যন্ত্রটি ব্যবহার করতে গিয়ে সমস্যা সম্মুখীন হন। কারণ, তিনি নীল আলো প্রতিরোধী কন্টাক্ট লেন্স পরেছিলেন, যা ‘অরবি’ শনাক্ত করতে পারেনি।
যন্ত্রটি প্রাথমিকভাবে তাকে ‘ভুল পরিচয়ধারী’ হিসেবে চিহ্নিত করে।
ইতিমধ্যেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে, বিশেষ করে শপিংমল ও জনবহুল স্থানে এই ‘অরবি’ ব্যবহারের সুযোগ তৈরি করা হয়েছে। বর্তমানে বিশ্বের প্রায় ১ কোটি ২০ লক্ষ মানুষ এই প্রযুক্তির মাধ্যমে তাদের পরিচয় যাচাই করেছেন।
কোম্পানিটি খুব শীঘ্রই ল্যাটিন আমেরিকায় এই পরিষেবা সরাসরি গ্রাহকদের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে।
এই প্রযুক্তির উদ্ভাবক সংস্থা ‘টুলস ফর হিউম্যানিটি’। তারা বলছে, এই ‘অরবি’ ব্যবহারকারীর গোপনীয়তাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়। তাদের মতে, ‘ওয়ার্ল্ড আইডি’ ব্যবহারকারীদের অনলাইন জগতে স্বাধীনতা এনে দেবে।
ব্যবহারকারীর ডেটা সুরক্ষিত রাখতে ছবিগুলো তাদের ফোনে পাঠানো হয় এবং তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে ডিভাইস থেকে মুছে ফেলা হয়।
তবে, এই প্রযুক্তির কিছু নেতিবাচক দিকও রয়েছে। বিশেষ করে, ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা এবং নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি নিয়ে অনেকে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
যুক্তরাজ্য ও হংকং সহ বেশ কয়েকটি স্থানে ইতোমধ্যে এই প্রকল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। সমালোচকদের মতে, এই ধরনের প্রযুক্তি বেশি পরিমাণে ডেটা সংগ্রহ করে এবং এটি স্যাম অল্টম্যানের মতো প্রভাবশালী প্রযুক্তিবিদদের হাতে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করতে পারে।
বর্তমানে, এই প্রযুক্তি বাংলাদেশে সরাসরি উপলব্ধ না হলেও, বিশ্বজুড়ে এর প্রভাব বিবেচনা করে বাংলাদেশের অনলাইন ব্যবহারকারীদের জন্য এর ভালো-মন্দ দিকগুলো সম্পর্কে অবগত থাকা জরুরি।
ভবিষ্যতে অনলাইনে পরিচয় যাচাইয়ের ক্ষেত্রে এটি কেমন প্রভাব ফেলবে, তা এখন দেখার বিষয়।
তথ্য সূত্র: সিএনএন